সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট ছড়ানো হচ্ছে যেখানে বলা হচ্ছে, ব্র্যাক ব্যাংক দেশের ৫০ লাখ পরিবারকে করোনা সহায়তার অংশ হিসেবে সাড়ে তিন হাজার টাকা করে দিচ্ছে। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
'BD Sales Group' নামের একটি গ্রুপে গত ১ অক্টোবর 'Shoyeb Ashraful' নামের একটি আইডি থেকে করা এক দীর্ঘ পোস্টে একটি লিংক দিয়ে বলা হয়, উক্ত লিংকে ঢুকে চেষ্টা করতে এবং গ্যারান্টি দেয়া হচ্ছে সচল বিকাশ অ্যাকাউন্ট থাকলে সাড়ে তিন হাজার টাকা অর্থ সহায়তা পাওয়া যাবে। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
পোস্টের সাথে দেয়া লিংকটি ক্লিক করলে একটি ওয়েবপেজ আসে যার সারফেস অবিকল বিকাশ মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসের ওয়েবসাইটের মতো দেখতে। যেখানে ব্যক্তির নাম, ফোন নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর এবং জেলার নাম নিবন্ধন করলে পরের পেজ আসে। এই ধাপে একটি তৈরি করা ফেসবুক পোস্ট শেয়ার করার নির্দেশনা দেয়া রয়েছে, যা মূলত আলোচ্য ওয়েব লিংকেরই বিজ্ঞাপন। সেখানে বলা হয়েছে, এই বিজ্ঞাপন ১০টি গ্রুপ/পেইজে পোস্ট না করলে কথিত করোনা সহায়তার টাকা পাওয়া যাবেনা। পেজগুলোর স্ক্রিনশট দেখুন--
ফেসবুকে সার্চ করে দেখা গেছে, গতবছরেও আলোচ্য ফেসবুক পোস্টটি ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছিল। স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ অনুসন্ধান করে দেখেছে, বাংলাদেশ সরকার কিংবা ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোন 'করোনা সহায়তা' এর ঘোষণা দেয়া হয়নি। কোনো সংবাদমাধ্যমে বা ব্র্যাকের ওয়েবসাইটেও এমন কোনো ঘোষণার খবর পাওয়া যায়নি।
উক্ত লিংকে ক্লিক করার পর দেখা যায় প্রথম পেজে লেখা হয়েছে, "ব্রাকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ মাহমুদুল বলেন, ব্রাক সবসময় মানুষের কল্যাণে কাজ করেছে। দেশের এই করোনা পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ এর উপকারে আসতে পেরে ব্রাক পরিবার গর্বিত"।
বুম বাংলাদেশ অনুসন্ধান করে 'প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা' পদবী বা আসিফ মাহমুদুল নামে কোনো ব্যক্তি সম্পর্কিত তথ্য বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকে এবং ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড-এর ওয়েবসাইটে খুঁজে পায়নি। ওয়েবসাইটের হালনাগাদ তথ্য অনুসারে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে জনাব আসিফ সালেহ্'র নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ব্র্যাকের ওয়েবসাইট দেখুন এখানে এবং নতুন নির্বাহী পরিচালকের নিয়োগ সম্পর্কিত খবর দেখুন এখানে। আবার ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের ওয়েবসাইটে পরিচালনা পর্ষদ-এ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে সেলিম আর. এফ. হোসেন-এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ব্র্যাকের এবং ব্যাক ব্যাংক লিমিটেডের ওয়েবসাইটের স্ক্রিনশট পাশাপাশি দেখুন--
অর্থাৎ ওয়েবসাইটটিতে কর্মকর্তাদের ভুল নাম ও পদবী ব্যবহার করা হচ্ছে।
এদিকে পোস্টটির সত্যতা জানার জন্য বুম বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিকাশের হেল্প লাইনে যোগাযোগ করা হলে, সেখান থেকে ব্র্যাক বাংকের তরফ থেকে বিকাশের মাধ্যমে ৫০ লাখ পরিবারকে এ ধরণের সহয়তার বিষয়টি নাকচ করে দেন।
এছাড়া, বিভিন্ন কিওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করে ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষ থেকে ২০২০ সালের ২ এপ্রিল দৈনিক প্রথম আলো অনলাইন ভার্সনে "এক লাখ অতিদরিদ্র পরিবারকে অর্থ দিচ্ছে ব্র্যাক" শিরোনামে একটি খবর খুঁজে পাওয়া যায়। খবরে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ'র বরাত দিয়ে, কর্মঝুঁকিতে পড়া দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য ব্র্যাকের পক্ষ থেকে ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়, যার আওতায় পরিবারগুলোকে নগদ ১৫০০ টাকা করে অর্থ সহায়তা দেয়া হয়। দেখুন খবরটির স্ক্রিনশট--
কিন্তু একাধিকবার সার্চ করার পরও ৩৫০০ টাকা করে দেয়ার কোন ঘোষণা সংক্রান্ত খবর খুঁজে পাওয়া যায়নি কিংবা চলতি বছর ব্র্যাক কিংবা ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষ থেকে করোনার জন্য কোন প্রকার অর্থ সহায়তার খবর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত এরআগেও বুম বাংলাদেশ ফেসবুকে 'বিকাশ' এর ওয়েবসাইটের আদলে ওয়েবসাইট বানিয়ে এ ধরনের ভুয়া উপহারের খবর ছড়ানোর বিষয় চিহ্নিত করেছিল। দেখুন এখানে।
সুতরাং বিকাশের অনুরূপ ওয়েবপেজ খুলে সেখানে ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষ করোনা সহায়তার নামে প্রতারণামূলক তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।