সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে পোস্ট করে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ স্কাউটসের পক্ষ থেকে সতর্কতা জারি করা হয়েছে, যদি কারো বাড়িতে অপরিচিত কেউ এসে নিজেদেরকে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী দাবি করে ডায়াবেটিস আছে কিনা পরীক্ষা করতে চায় তাহলে তাদেরকে পরীক্ষা করার সুযোগ না দিতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি এরকম কোনো ঘটনা ঘটলে দ্রুত পুলিশকে অবহিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, কারণ তারা আইএস জঙ্গি বলে দাবি করা হয় সেসব পোস্টে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২০ জুন "সেবা ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ" নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে "Goljar Hoshen" নামে একটি আইডি থেকে পোস্ট করে বলা হয়, "সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে।।।।।। দৃষ্টি আকর্ষন করছি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন...... যদি আপনার বাসায় অপরিচিত কেউ এসে বলে যে আমরা মেডিকেল কলেজ থেকে এসেছি। আপনার রক্তের গ্লুকোজ বা ডায়াবেটিস আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখব, কোন ফি লাগবে না। ভুলেও পরীক্ষাটা করতে দিবেন না। শীঘ্রই ৯৯৯ কল দিবেন কিংবা পুলিশকে অবহিত করবেন। কারণ তারা আইএস জঙ্গি। তারা আপনার রক্তে এইচ আইভি এইডস ভাইরাস প্রবেশ করিয়ে দিবে। বন্ধু এবং আত্মীয়-স্বজনদের কাছে এটা শেয়ার করুন। ধন্যবাদ, বাংলাদেশ স্কাউট।" ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
বাংলাদেশ স্কাউটসের নাম ব্যবহার না করে কোন সংস্থার বরাত ছাড়াও একইরকম পোস্ট করা হচ্ছে। এরকম একটি পোস্টের স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। কোনো মেডিকেল টিম বা আইএস সংক্রান্ত সতর্কতা জারি করা হয়নি বলে বাংলাদেশ স্কাউটস ও নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ স্কাউটস আসলেই এরকম কোনো সতর্কতা জারি করেছে কি না জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গণমাধ্যমে, বাংলাদেশ স্কাউটসের ফেসবুক পেজ, গ্রুপ বা সংশ্লিষ্ট কোথাও মেডিকেল শিক্ষার্থীর ছদ্মবেশে আইএস জঙ্গীদের ব্যাপারে সতর্কতা জারি করার কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ স্কাউটসের সরকারি ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, ওয়েবসাইটটিতে সর্বশেষ এবং একমাত্র প্রেস রিলিজটি প্রকাশ করা হয়েছে ২০১৯ সালে। অর্থ্যাৎ, বাংলাদেশ স্কাউটের পক্ষ থেকে তাদের ওয়েবসাইটেও মেডিকেল শিক্ষার্থীর ছদ্মবেশে আইএস জঙ্গীদের ব্যাপারে সতর্কতা জারি করার কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্ক্রিনশট দেখুন--
এরপর বাংলাদেশ স্কাউটসের নামে আলোচ্য দাবিটি ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ স্কাউটসের আইসিটি বিভাগের উপ-পরিচালক হামজার রহমান শামীম বুম বাংলাদেশকে জানান, বাংলাদেশ স্কাউটস থেকে এ ধরণের কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ স্কাউটস এর ফেসবুক পেজ অথবা গ্রুপ থেকে এ ধরনের কোন পোস্টও দেয়া হয়নি। কেউ নিজের ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকে বাংলাদেশ স্কাউটস এর নামে পোস্ট দিয়ে থাকলে তা বাংলাদেশ স্কাউটস এর আইসিটি পলিসির পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এছাড়া কোনো সোর্স ব্যতিত মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে চাওয়া এবং এর সাথে আইএস সংশ্লিষ্টতার পোস্টটি ভাইরাল হতে থাকলে এ ব্যাপারে জানতে ঢাকা মহানগর পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে বুম বাংলাদেশ। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) ইউনিটের উপকমিশনার মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ জানান, বিভিন্ন সময়ে এধরনের বক্তব্য ভাইরাল হতে দেখা গেছে। এই দাবিটি সম্পূর্ণ ভুয়া উল্লেখ করে তিনি ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার্থে অপরিচত কাউকে নিজের বাসায় প্রবেশ অথবা ব্যক্তিগত কোনো তথ্য না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
অর্থ্যাৎ বাংলাদেশ স্কাউটস ও নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে এ ধরণের কোনো সর্তক বার্তা কিংবা রেড এলার্ট জারি করা হয়নি।
সুতরাং বাংলাদেশ স্কাউটসের নামে এবং কোথাও কোথাও সোর্স ছাড়াই মেডিকেল শিক্ষার্থীর ছদ্মবেশে আইএস জঙ্গীদের এইচআইভি ভাইরাস ছড়ানোর ভুয়া দাবি প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।