সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক পেজ থেকে পানিতে ভাসমান এক শিশুর ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ছবিটি সিলেটে চলমান বন্যার। ছবির সাথে বন্যার জন্য ত্রান-সাহায্য অনুদান গ্রহণের নম্বরও যুক্ত করা হয়েছে কিছু ফেসবুক পোস্টে। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ১৮ জুন '7 College' নামের ফেসবুক পেজ থেকে ছবি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়, "অসুস্থ শিশুটিকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন অভাগা মা। কিন্তু হাসপাতালেও বন্যার পানি ওঠায় শিশুটিকে নিয়ে বাড়ি যাওয়ার পথে নৌকা ডুবে গেলে দাদা বাবুদের দেওয়া উপহারের স্রোতে মায়ের হাত থেকে এভাবেই ভেসে চলে যায় শিশুটি।💔 এগিয়ে আসুন . আপনার সাহায্যে বেচে যেতে পারে কারো প্রান ✅ ভয়াবহ বন্যায় তলিয়ে গেছে সিলেট ও সুনামগঞ্জ। তাদের পাশে দাড়াতে এগিয়ে আসুন।" পোস্টের স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ছবির বর্ণনায় করা দাবিটি সঠিক নয়। ছবিটি বাংলাদেশের নয় বরং নেপালের এবং ছবির বর্ণনায় লেখা গল্পটিও সঠিক নয়।
ছবিটি সার্চ করার পর, ' Inondations en Inde, au Népal et au Bangladesh: au moins 175 morts ( স্বয়ক্রিয় অনুবাদ- Floods in India, Nepal and Bangladesh: at least 175 dead) ' শিরোনামে ফরাসি ভাষী সংবাদমাধ্যমে 'La Liberté'-এর একটি প্রতিবেদনে খুঁজে পাওয়া যায়, যা ২০১৭ সালের ১৪ আগস্ট প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে যুক্ত করা ছবির বিবরণে, শিশুটির নাম 'সাদা' এবং ঘটনাটি নেপালের বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ছবিটির তুলেছেন- নরেন্দ্র শ্রেষ্ঠা নামে একজন ফটোগ্রাফার। স্ক্রিনশট দেখুন--
এই সূত্র ধরে সার্চ করার পর, ছবিটি যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বাজফিডে ' Floods Left No Land To Bury A Dead Child. So His Family Left Him In The River' শিরোনামে ২০১৭ সালের ১৪ আগস্ট প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে শিশুটির একাধিক ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। স্ক্রিনশট দেখুন--
প্রতিবেদনে লেখা হয়, ৮ বছর বয়সি নেপালি শিশুটির নাম কমল সাদা। ২০১৭ সালে বন্যার সময় নরেন্দ্র শ্রেষ্ঠা নামে একজন নেপালি ফটোগ্রাফার নেপালের সেনাবাহিনীর সঙ্গে উদ্ধারকাজে নিযুক্ত একটি নৌকায় ভ্রমনের সময় শিশুটির খোজ পান। শিশুটি নিউমোনিয়ায় ভুগে মারা গিয়েছিল। বন্যা ও বৃষ্টির কারণে পরিবার শিশুটিকে হাসপাতালে নিতে পারেনি। শিশুটির মৃত্যুর পর স্থানীয় রীতিমত সৎকারের উদ্যোগ নেয়া হলেও বন্যায় কোনো শুষ্ক ভূমি না থাকায় তার চাচা তাকে পাশের কুশি নদীতে ভাসিয়ে দেয়।
ছবিটি পরে একাধিক পুরষ্কার ও সম্মাননা লাভ করে। তন্মধ্যে, ২০১৭ সালে বাজফিডের নির্বাচিত সেরা ৪০ ছবির মধ্যে আলোচ্য শিশুর ছবির স্থান পাওয়ার খবর নরেন্দ্র শ্রেষ্ঠা তার ইন্সটাগ্রাম একাউন্টে পোস্ট করেছিলেন।
অর্থাৎ ছবিটি সিলেটে চলমান বন্যার নয় বরং নেপালের ২০১৭ সালের বন্যার। পাশাপাশি ভাইরাল ফেসবুক পোস্টে যুক্ত করা গল্পটিও সঠিক নয়।
প্রসঙ্গত, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী গত কয়েকদিন ধরে ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বর্ষণের কারণে ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় বিভিন্ন নদ-নদীর পানি উপচে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলাতে বন্যা দেখা দিয়েছে।
সুতরাং নেপালের একটি পুরোনো ছবিকে সিলেটের সাম্প্রতিক বন্যার দাবি করে প্রচার করা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে, যা বিভ্রান্তিকর।