সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক পেজ ও আইডি থেকে একটি ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করে বলা হচ্ছে, এটি সিলেটের সাম্প্রতিক বন্যার সাথে সম্পৃক্ত। ভিডিওটিতে নদীর পাশের একাধিক স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে দেখা যায়, আবার বন্যার কিছু দৃশ্যও দেখতে পাওয়া যায়। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ২৫ জুন 'Raj Kumar Somaiya' নামের ফেসবুক আইডি থেকে থেকে ভিডিও ক্লিপটি শেয়ার করে লেখা হয় "সিলেটে বন্যা অবনতি ভেসে যাচ্ছে ঘর বাড়ি"। স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ভিডিওটি ভিন্ন ঘটনার একাধিক ফুটেজ একসাথে যুক্ত করে তৈরী করা, যার মধ্যে অন্তত ৫ ফুটেজ রয়েছে, যা সিলেটের বন্যার সাথে সম্পৃক্ত নয়।
প্রথম ফুটেজ
আলোচ্য ভাইরাল ভিডিওর শুরু থেকে ৮ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশে আকাশি রংয়ের একটি বহুতল ভবনকে নদী গর্ভে বিলীন হতে দেখা যায়। ভিডিওর এই অংশ কী ফ্রেম নিয়ে রিভার্স সার্চ করার পর, 'TechTV BD' নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে "Dewan Clinic Destroyed in River Erosion | Upazila Government Hospital At The Risk Of River Erosion" ক্যাপশনে ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটি দেখুন--
সার্চ করার পর, ২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর অনলাইন ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম জাগোনিউজ২৪ ডটকমে "পদ্মার পেটে ২শ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ঝুঁকিতে হাসপাতাল" শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে স্থাপনাটির ছবিও খুঁজে পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, তৎকালে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় পদ্মা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে ক্লিনিকসহ একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। স্ক্রিনশট দেখুন--
দ্বিতীয় ফুটেজ
আলোচ্য ভিডিওর ৩৮ সেকেন্ড থেকে ৫০ সেকেন্ড পর্যন্ত নদী পাড়ের একটি তিন তলা ভবন দেখতে পাওয়া যায়। রিভার্স সার্চ করে দেখা গেছে এই ভবনটিও সিলেটের বা সাম্প্রতিক কোনো ঘটনার নয়। সার্চ করার পর, 'TechTV BD' নামের ইউটিউব চ্যানেলে "পদ্মার পারে রহস্যজনক ভাবে দাড়িয়ে আছে গাজী কালুর বাড়ি, আসল রহস্য কি জানুন" ক্যাপশনে ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর আপলোড করা একটি ভিডিওতে আলোচ্য ভবনটি দেখতে পাওয়া যায়। ইউটিউব ভিডিওর বিবরণ থেকে জানা যায়, শরীয়তপুর জেলার এই বিলাসবহুল বাড়িটি ১৯৯৮সালে নির্মাণ করা হয়। ভিডিওটি দেখুন--
ইউটিউবে সার্চ করার পর, পদ্মাপাড়ের এই বাড়িটির আরও একাধিক ভিডিও খুঁজে পাওয়া গেছে। এরকম আরেকটি ভিডিও দেখুন--
এছাড়াও আলোচ্য ভিডিওটিতে আরও অন্তত ৩টি ফুটেজ খুঁজে পাওয়া গেছে যা সিলেটের সাম্প্রতিক বন্যার নয়। বুম বাংলাদেশ ফুটেজগুলো যাচাই করে প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে।
পানির স্রোতে বাড়ি ভেসে যাওয়ার ফুটেজটি ইন্দোনেশিয়ার
আলোচ্য ভিডিওতে ১ মিনিট ১৫ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ২০ সেকেন্ড পর্যন্ত বন্যার পানির স্রোতে একটি বাড়ি ভাসিয়ে নিয়ে যাবার দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। বুম বাংলাদেশ দেখেছে ভিডিওটি বাংলাদেশের নয় বরং এটি ২০২১ সালে ইন্দোনেশিয়ার লম্বক দ্বীপে ঘটা বন্যার সময় ধারণ করা একটি ফুটেজ। প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে। স্ক্রিনশট দেখুন--
টিনের বাড়িটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার ফুটেজটি সিরাজগঞ্জের
ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিওটির ১ মিনিট ২২ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ২৮ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশে একটি বাড়িকে পানিতে তলিয়ে যেতে দেখা যায়। বুম বাংলাদেশ দেখে, ২০২০ সালের জুলাই মাসে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি এবং নদী পাড় ভাঙনের ভিডিও এটি। স্ক্রিনশট দেখুন--
মোটরসাইকেল ভেসে যাবার ফুটেজটি ভারতের
আলোচ্য ভিডিওটির ১ মিনিট ৩৩ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ৩৭ সেকেন্ড পর্যন্ত বন্যার পানিতে একটি মোটরবাইক ভেসে যেতে দেখা যায়। ভিডিওটি সিলেটের বন্যার দাবি করে ভাইরাল হলে বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখে ভিডিওটি মূলত ২০১৬ সালে ভারতের রাজস্থান রাজ্যের বন্যার ঘটনার। প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে। স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ ভাইরাল ভিডিওটির অন্তত ৫ টি ফুটেজ সিলেটের সাম্প্রতিক বন্যার সাথে সম্পৃক্ত নয়।
সুতরাং ভিন্ন ঘটনার একাধিক ফুটেজ যুক্ত করে সিলেটের বন্যার দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে, যা বিভ্রান্তিকর।