সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কন্টেইনার সহ ক্ষতিগ্রস্ত একটি জাহাজের ছবি পোস্ট করে বলা হচ্ছে, লোহিত সাগরে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজের ছবি এটি।এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ৮ মে 'Shahriyar Hosen' নামের অ্যাকাউন্ট থেকে ছবিটি পোস্ট করে বলা হয়, "লোহিত সাগরে ইয়েমেনের হু*তিরা আরেকটি উইকেটের পতন ঘটালো। আলহামদুলিল্লাহ!"। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। ছবিটি সম্প্রতি লোহিত সাগরে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজের নয় বরং ২০১১ সালে নিউজিল্যান্ডের সমুদ্রসীমার মধ্যে সমুদ্রের উঁচু তলদেশ (Reef) অ্যাস্ট্রোল্যাব রীফে আটকে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজের ছবি এটি।
আলোচ্য ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে নিউজিল্যান্ডের 'Royal New Zealand Navy' এর ভেরিফাইড পেজে আলোচ্য ছবি'সহ প্রকাশিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। এতে উল্লেখ করা হয়, ২০১১ সালের ৫ অক্টোবর, (নিউজিল্যান্ডের) নেপিয়ার থেকে তৌরাঙ্গা যাওয়ার সময় ৪৭,০০০ টন ওজনের কনটেইনার জাহাজ 'রেনা' তৌরাঙ্গার ২০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বের অ্যাস্ট্রোলাব রিফ-এ আটকা পড়ে।
জাহাজটিতে ১,৩৬৮ টি কন্টেইনার এবং প্রায় ২,০০০ টন জ্বালানি তেল ছিল। জাহাজের তলদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ৩৬০ টনের বেশি ভারী জ্বালানী তেল বেরিয়ে গিয়ে সাগরের পানিকে দূষিত করেছিল। ফলে নিউজিল্যান্ডের পার্শ্ববর্তী সাগরে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সার্চ করে কাতার ভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম 'আল জাজিরা' এর অনলাইন সংস্করণে ২০১১ সালের ১৫ অক্টোবর "Stricken cargo ship was ‘rushing to port’" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এতে উল্লেখ করা হয়, ২০১১ সালের ৫ অক্টোবর জাহাজ 'রেনা' অ্যাস্ট্রোলাব রিফ-এ ধাক্কা লাগে এবং আটকে যায়। রেনার ক্যাপ্টেন ও নেভিগেশনাল ওয়াচের অফিসারের বিরুদ্ধে অপ্রয়োজনীয় বিপদ বা ঝুঁকি সৃষ্টি করে এমনভাবে একটি জাহাজ পরিচালনা করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই প্রতিবেদনেও জাহাজটি আলোচ্য ছবির তুলনায় একটু ভিন্ন দিক থেকে তোলা একটি ছবি যুক্ত করা হয়। প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়া আরো সার্চ করে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপি কর্তৃক ২০১২ সালে প্রকাশিত আলোচ্য দুর্ঘটনার পরের সময়ের জাহাজটির একটি ভিডিও পাওয়া যায়।
অর্থাৎ আলোচ্য ছবিটি লোহিত সাগরে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের হামলার শিকার কোনো জাহাজের নয় বরং এটি ২০১১ সালে নিউজিল্যান্ডের সমুদ্রসীমায় সমুদ্রের উঁচু তলদেশে আটকা পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজের ছবি।
উল্লেখ্য পরবর্তীতে ২০১২ সালে জাহাজটির ক্যাপ্টেন ও সেকেন্ড অফিসারের সাত মাসের জেল হয়েছিল বলে গণমাধ্যমে খবর পাওয়া যায়।
সুতরাং সামাজিক মাধ্যমে জাহাজের দুর্ঘটনার পুরোনো ছবি ব্যবহার করে অসত্য তথ্য প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।