সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক পেজ থেকে একটি মুদ্রার ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ১৮১৮ সালে এই অঞ্চলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিরশাসনামলে চালু করা ভারতীয় মুদ্রার ছবি এটি। দাবি করা হচ্ছে মুদ্রায় হিন্দু অবতার শ্রী রাম ও সীতার ছবি ছিল। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ২৩ এপ্রিল 'Ashish Sarkar' নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে ছবিটি পোস্ট করে লেখা হয়, "তৎকালীন আমলের মুদ্রা।❤️ সনাতন সত্য, সনাতন আদী,সনাতন শ্রেষ্ঠ ধর্ম"। স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি বিভ্রান্তিকর। ১৮১৮ সালে ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে এরকম সনাতনী কোনো মুদ্রার প্রচলন থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়না।
গুগলে কিছু কি-ওয়ার্ড ধরে সার্চ করে ভারতীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান snap deal, flipkart-এ এই মুদ্রার কিছু ছবি পাওয়া যায়। যা ক্রেতারা কিনতে পারেন। ফ্লিপকার্টের পণ্যের স্ক্রিনশট দেখুন--
সার্চ করার পর আরেকটি ই-কমার্স সাইট Shopclues এ একই মুদ্রার ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। পণ্যের বিবরণে ছবিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে মুদ্রাটি ১৮১৮ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রচলন করেছিল যাকে পূজার আচার-অনুষ্ঠানে মন্দিরে দেওয়া হত। স্ক্রিনশট দেখুন--
আরও নিশ্চিত হতে, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে অনুসন্ধানের পরেও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে প্রচলিত এমন কোনো মুদ্রার তথ্য পাওয়া যায়নি। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে সিন্ধু সভ্যতা থেকে শুরু করে মুঘল সাম্রাজ্য ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির যুগের সব মুদ্রার ছবি রয়েছে। ওয়েবসাইটে ১৭২০ থেকে ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের সময় পর্যন্ত মুদ্রার যে ছবি দেয়া হয়েছে সেখানে কোথাও আলোচ্য পোস্টে উল্লেখিত সনাতনী মুদ্রার ছবি নেই। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে পাওয়া তৎকালীন কিছু মুদ্রার ছবি দেখুন--
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে ভারতবর্ষ জুড়ে পৃথক সাম্রাজ্য যেমন হায়দরাবাদ, অযোধ্যা ও উদয়পুরে ভিন্ন ভিন্ন মুদ্রার প্রচলন ছিল। ভারতের রিজার্ভ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে সেগুলোর উল্লেখ আছে। তবে এগুলোর কোনোটার সাথেও উল্লেখিত মুদ্রার সাথে আলোচ্য সনাতনী মুদ্রার মিল নেই।
অর্থাৎ ১৮১৮ সালে ভারতে কোম্পানি শাসনামলে সরকারিভাবে এরকম সনাতনী মুদ্রা প্রচলনের কোনো প্রমান নেই। তবে হতে পারে এটি মন্দিরে পূজার জন্য প্রচলিত কোন মুদ্রা।
সুতরাং ভারতবর্ষে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে ১৮১৮ সালে রাম-সীতার ছবিযুক্ত সনাতনী মুদ্রার প্রচলন হয়েছিল বলে করা দাবিটি সঠিক নয় বরং বিভ্রান্তিকর।