সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি ও পেজ থেকে একাধিক অখ্যাত অনলাইন পোর্টালের লিংক শেয়ার করে, সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মা মারা যাওয়ায় বাচ্চা কোলে নিয়ে এক বাবা ক্লাস নিচ্ছেন এমন একটি খবর পোস্ট করা হচ্ছে। কিছু পোস্টের সাথে একজন ব্যক্তির ছবিও যুক্ত করা হয়েছে। ছবিতে দেখা যায়, বেবি বেল্ট দিয়ে শিশুটিকে বুকে বেঁধে এক শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ২৭ আগস্ট 'Khabor Dinvor' নামের ফেসবুক পেজ থেকে একটি অনলাইন পোর্টালের লিংক শেয়ার করে বলা হয় "সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেছেন মা, বাবা এই ভাবেই বাচ্চা কোলে নিয়ে নিজের শিক্ষকতা করছেন।" অর্থাৎ, দাবি করা হচ্ছে শিশুটি ছবিতে দেখতে পাওয়া ওই শিক্ষকের সন্তান, যাকে প্রসবের সময় তার মা মারা গেছেন।
হুবহু একই শিরোনামে প্রকাশিত অনলাইন পোর্টালের ওই খবরটিতে প্রকাশের ডেটলাইন হিসাবে লেখা হয়েছে "5 days ago" এবং খবরের বর্ণনায় শিক্ষকের নাম পরিচয় কিছুই না দিয়ে কেবল ভারতীয় আইএএস অফিসার অবিনাশ শরণ-এর টুইটার অ্যাকাউন্টে ছবিটি শেয়ার করার কথা বলা হয়েছে।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় আইএএস অফিসার অবিনাশ শরণ-এর করা টুইট
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ছবিটির সাথে প্রচার করা দাবি বা খবরটি ভুয়া।
খবরে ব্যবহার করা ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করার পর, যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গণমাধ্যম সিএনএন-এর স্প্যানিশ সংস্করণে ২০১৬ সালে প্রকাশিত একটি খবরে ছবিটি খুঁজে পাওয়া গেছে। খবরটির স্বয়ংক্রিয় অনুবাদ থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৩ জুলাই প্রকাশিত "Teacher holds his student's baby so she can take notes" শিরোনামে খবরটির বর্ণনায় বলা হয়েছে--
"a Mexican teacher uploaded a photograph to Facebook carrying the baby of one of his students so that she could take notes. This is Moisés Reyes Sandoval, a law professor at the Inter-American University for Development, UNID, in Acapulco and whose photograph has been shared more than 20,000 times in a week on social networks."
অর্থাৎ বেবি বেল্ট দিয়ে বুকের সঙ্গে শিশুকে বেঁধে ক্লাস নেয়া মোয়েজাজ রেয়েস স্যান্ডোভাল নামের ওই ব্যক্তি মেক্সিকোর আকাপুলকো শহরের ইন্টার-আমেরিকান ইউনিভার্সিটি ফর ডেভেলপমেন্ট (ইউএনআইডি) বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের একজন শিক্ষক। আর শিশুটি ইয়ালেনা সালাস নামের তাঁর এক ছাত্রীর, যিনি ক্লাসে নিজ শিশু সন্তানকে নিয়ে এসেছিলেন। ওই ছাত্রীটি যেন ক্লাসে মনোযোগী হয়ে নোট নিতে পারেন সেজন্যই ওই শিক্ষক শিশুটিকে নিজে বহন করেন।
এর সূত্র ধরে বিস্তারিত সার্চ করার পর শিক্ষকের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতেও একই ঘটনার ছবি খুঁজে পাওয়া গেছে। স্প্যানিশ ভাষায় লেখা ছবিটির বর্ণনার স্বয়ংক্রিয় অনুবাদ থেকে জানা যায়, "I have a student who has not dropped out of school despite her different roles, so I decided to carry her son without interrupting class…"
অর্থাৎ শিশুটির মা মারা যাননি এবং শিশুটি ওই শিক্ষকের সন্তান নয় বরং এটি তাঁর ছাত্রীর। ক্লাস চলাকালে শিশুটিকে বেবি বেল্টের মাধ্যমে বুকে বেঁধে রেখেছিলেন ওই শিক্ষক, যাতে শিশুটির মা ক্লাসে মনযোগ দিতে পারেন এবং প্রয়োজনীয় নোট নিতে পারেন। মূলত এই ছবিটিকেই 'স্ত্রী মারা যাওয়ার পর নিজ সন্তান কোলে নিয়ে বাবার শিক্ষকতা করার' ভুয়া দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে এবং খবর প্রকাশ করা হয়েছে একাধিক অনলাইন পোর্টালে।
সুতরাং মেক্সিকান এক শিক্ষকের নিজ ছাত্রীর শিশুকে বুকে বেঁধে ক্লাস নেওয়ার ৫ বছরেরও বেশি পুরোনো খবরকে বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে।