সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও দিয়ে দাবি করা হচ্ছে, ইলেকট্রিক শক দিয়ে এক হিন্দু নারীকে মুসলিম বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। দেখুন এমন তিনটি পোস্টের লিংক এখানে, এখানে এবং এখানে।
গতকাল (১৬ মার্চ) 'Bidhan Das' নামের একটি ফেসবুক প্রোফাইল থেকে ৩৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হয়, 'পাকিস্তানে এক হিন্দু কিশোরী শিশুকে ৪৪০ ভোল্টের ইলেকট্রিক শক দিয়ে ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে'। অর্থাৎ দাবি করা হচ্ছে, একজন কিশোরীকে অত্যাচার করে ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে ভিডিওটিতে। দেখুন স্ক্রিনশট--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, পোস্টটি বিভ্রান্তিকর। একাধিক উৎস থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে, উপরোক্ত ভিডিওটি ধর্মান্তরিত করার কোন ঘটনার নয়। মূলত পাকিস্তানের এক পীরের কথিত 'জিন তাড়ানোর' ভিডিও এটি। প্রথমত, রিভার্স সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে ভিডিওটি রেডিটে পাওয়া গেছে। সেখানেও দাবি করা হয়, ইলেকট্রিক শক দিয়ে এক কিশোরীকে ধর্মান্তরিত করার ভিডিও এটি। দেখুন--
ভিডিওটির নিচে বেশ কিছু মন্তব্য পাওয়া যায়। সেখান থেকে জানা যায়, ভিডিওটি মূলত পাকিস্তানের এক পীরের 'জিন তাড়ানোর' ভিডিও। মন্তব্যটির সাথে একাধিক খবরের লিংকও যুক্ত করা হয়েছে।
তন্মধ্যে পাকিস্তানের দুনিয়া নিউজের ইংরেজি খবরে উক্ত পীরের ছবিও পাওয়া যায়, যা ভাইরাল ভিডিওটিতে প্রদর্শিত পীরের সাথে সমূহ মিল আছে। দেখুন--
খবরটিতে বলা হয়, পেশোয়ারে কথিত 'জিন-ভুত তাড়ানোর' সময়ে শিশুদের ইলেকট্রিক শক দিতেন। উক্ত পীরের নাম মোহাম্মদ উল্লাহ এবং তার পিতার নাম কুদরতুল্লাহ। সেই খবরে আরো বলা হয়, এর আগেও তিনি একই অপরাধে গ্রেফতার হয়েছিলেন।
পরবর্তীতে এই নাম সার্চ করে একই নামে একটি ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেল পাওয়া গেছে। তবে সেখানে আলোচ্য ভিডিও যেখানে একজন কিশোরী মেয়ের কথিত 'জিন তাড়ানোর' ভিডিওটি পাওয়া যায়নি। তবে এ সংক্রান্ত একাধিক ভিডিও পাওয়া গেছে যেখানে একই ব্যক্তি একই রুমে একাধিক ব্যক্তিকে এ ধরণের চিকিৎসা দিচ্ছে। দেখুন এমন একটি ভিডিও--
ভিডিওটি দেখুন এখানে।
একই নামের ইউটিউব চ্যানেলেও এভাবে জ্বিন তাড়ানোর ভিডিও পাওয়া গেছে। দেখুন আরেকটি ভিডিও--
এছাড়া ভারতের ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা অল্টনিউজের বরাতে জানা যায়, তিনি একাধিকবার এরকম বিতর্কিত চিকিৎসাপদ্ধতির কারণে গ্রেফতার হয়েছেন। এছাড়া পেশোয়ারের স্থানীয় থানা থেকে বলা হয়, সেখানে সকল মুসলিমই এ ধরণের চিকিৎসা নিতে তার কাছে যান।
তাছাড়া অল্টনিউজকে স্থানীয় হিন্দু নেতা হারুন সারবাদিয়া জানান, সেই পীর মোহাম্মদ উল্লাহ'র কাছে কোনো হিন্দু কখনো এ ধরণের চিকিৎসার জন্য যায়না। দেখুন অল্টনিউজের সেই ফ্যাক্টচেকিং প্রতিবেদনটি--
পড়ুন এখানে।
একইভাবে ইন্ডিয়া টুডে এ সংক্রান্ত একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে, ধর্মান্তরের দাবিটিকে নাকচ করেছে। দেখুন তাদের প্রতিবেদনটি এখানে--
দেখুন এখানে।
অর্থাৎ পাকিস্তানে মুসলিম কর্তৃক হিন্দু কিশোরীকে অত্যাচার করে ধর্মান্তরকরণের ভিডিও এটি নয়। মূলত পাকিস্তানের পেশোয়ারে এক বিতর্কিত পীর কর্তৃক 'জিন তাড়ানোর' ভিডিও এটি।
সুতরাং পাকিস্তানের এক কিশোরীর কথিত 'জিন তাড়ানোর' ভিডিওকে, হিন্দুকে মুসলিম ধর্মে ধর্মান্তরিত করার বলে দাবি করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।