ফেসবুকে একাধিক পেইজ এবং প্রোফাইল থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, মাওলানা মামুনুল হকের দ্বিতীয় বিবাহের কাবিননামা থানায় জমা দেয়া হয়েছে। দেখুন এমন কিছু পোস্ট এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
৫ এপ্রিল St new bangla নামের পেইজ থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয় যার ক্যাপশন ছিল, "মাওলানা মামুনুল হক এর ২য় বিয়ের কাবিন নামা নিয়ে হাজির হলেন থানায়" । ৩ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের সেই ভিডিওতে হেফাজতের পক্ষ থেকে সাদা পাঞ্জাবী পরিহিত একজনকে সোনারগাঁও থানা ওসি বরাবর একটি কাগজ হস্তান্তর করতে দেখা যায়। এছাড়া সেই ব্যক্তিকে কিছু বেশ কিছু কথা বলতেও শোনা যায়। দেখুন স্ক্রিনশট-
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ভিডিওতে দাবিকৃত মামুনুল হকের দ্বিতীয় বিবাহের কাবিননামা জমা দেয়ার কথাটি সত্য নয়। প্রথমত, ভিডিওটি নেয়া হয়েছে 'দৈনিক আমাদের সময়' পত্রিকার অফিশিয়াল ফেইসবুক পেইজ থেকে। দেখুন ৩ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের সেই ভিডিওটি নিচে--
'আমাদের সময়' এর ফেসবুকে পেইজের ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়েছে, 'সোনারগাঁওয়ে যুবলীগের সভাপতি ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতিকে আসামি করে থানায় হেফাজতের অভিযোগ'। এছাড়া সম্পূর্ণ ভিডিওটির কোথাও বলা হয়নি, হেফাজতে ইসলামের প্রতিনিধিরা মামুনুল হকের দ্বিতীয় বিবাহের কাবিননামা জমা দিয়েছেন।
ভিডিওটির শেষাংশে হেফাজতের উক্ত প্রতিনিধি যার নাম তিনি নিজে বলেছেন, মুফতি ফয়সাল মাহমুদ হাবিবি জানান, 'হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দ-কর্মীরা দাবি নিয়ে এসেছে। সে দাবি হল, আমাদের নেতা, আমাদের আইকন, আমাদের আইডল আল্লামা মামুনুল হক তার স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন নারায়নগঞ্জের রয়েল রিসোর্টে। সেখানে কতিপয় সন্ত্রাসী নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁ ঊপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু, নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহ মোহাম্মদ সোহাগ রনির নেতৃত্বে আমাদের নেতার উপর কেন হামলা চালানো হল, এর আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।'
তবে ভিডিওটিতে পুলিশের কাছে হস্তান্তরকৃত কাগজটি যেটিকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে কাবিননামা বলা হচ্ছে সে ব্যাপারে কোনো বিস্তারিত তথ্য জানা যায়না।
তবে এ সংক্রান্ত বিডিনিউজ২৪ এর একটি খবরে পুলিশের কাছে হস্তান্তরকৃত কাগজটির ব্যাপারে আরো বিস্তারিত পাওয়া যায়। গতকাল ৪ এপ্রিল 'রিসোর্ট কাণ্ডে মামুনুলের পক্ষে থানায় অভিযোগ' শিরোনামে বিডিনিউজ২৪ এর একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'রোববার দুপুরে সোনারগাঁ থানায় হাজির হয়ে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে লাঞ্ছিত করার এই অভিযোগ দায়ের করেন মুফতি ফয়সাল মাহমুদ হাবিবী নামের এক যুবক'।
এছাড়া বিডিনিউজ২৪ এর সেই প্রতিবেদনে মুফতি ফয়সাল কর্তৃক পুলিশের হাতে হস্তান্তরকৃত কাগজটির একটি ছবিও দেয়া হয়। দেখুন--
ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে, সেই কাগজটি মূলত সোনারগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর লিখিত একটি অভিযোগের। কাগজটির নিচে কাগজটির হস্তান্তরকারী মুফতি ফয়সাল হাবিবের নাম ও ফোন নাম্বার লিখিত আছে। বিডিনিউজ২৪ এর খবরটিতে কোনো কাবিননামা জমা দেয়ার কথার উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
একইভাবে প্রথম আলোর পত্রিকার প্রতিবেদনেও বলা হয়, মূলত থানায় অভিযোগপত্র জমা দিতেই গিয়েছিলেন তারা। যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের একাধিক নেতার বিরুদ্ধে মামুনুল হক এবং তার দাবিকৃত স্ত্রীর উপর হামলার অভিযোগ করেন তারা। দেখুন--
প্রথম আলোর প্রতিবেদনটিতেও পুলিশের কাছে কোনো কাবিননামা জমা দেয়ার কথা বলা হয়নি।
অর্থাৎ মামুনুল হকের উপর হামলার অভিযোগ দায়েরের ভিডিওকে তার দ্বিতীয় বিবাহের কাবিননামা জমা দেয়ার ভিডিও বলে দাবি করা বিভ্রান্তিকর।