সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে সম্প্রতি পানির নিচে দৃশ্যমান ভগ্নপ্রায় কিছু স্থাপনার ছবি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, এগুলো পৌরাণিক দ্বারকা নগরীর ধ্বংসাবশেষ। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এবং এখানে।
গত ২৬ নভেম্বর 'Spirituality of Sanatan' নামের ফেসবুক পেজ থেকে ছবিগুলো শেয়ার করে বলা, "সমুদ্রে বিলীন হওয়া পরমেশ্বর ভগবান শ্রী কৃষ্ণের দ্বারকা নগরী এখনও জলের নিচে বিরাজমান। 🙏🙏 ছবি: সংগৃহীত !"।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ভাইরাল ছবির বর্ণনায় করা দাবিটি বিভ্রান্তিকর। পৌরাণিক শহর দ্বারকা দাবি করে পোস্ট করা ছবিগুলো পরস্পর সম্পর্কহীন। অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন স্থানের কিছু ছবি একত্রে পোস্ট করে প্রাচীন দ্বারকা নগরীর ধ্বংসাবশেষ বলে দাবি করা হচ্ছে। বুম বাংলাদেশ ভাইরাল পোস্টের অন্তত চারটি ছবি যাচাই করে নিশ্চিত হয়েছে, এগুলোর কোনটিই পৌরণিক দ্বারকা নগরী ছবি নয়।
প্রথম ছবি
রিভার্স ইমেজ সার্চ করে, একাধিক ওয়েবসাইটে এই ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। তন্মধ্যে স্টক ছবির ওয়েবসাইট ফ্লিকারে ছবিটি পোস্ট করে একে 'ফুজিকাওয়া মারু' নামের একটি জাপানি জাহাজের টেলিগ্রাফ যন্ত্র বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে চুক লেগুণ এলাকায় মার্কিন হামলায় ডুবে যাওয়া জাপানি জাহাজের ধ্বংসাবশেষ বলেও জানানো হয় বিবরণে। প্রসঙ্গত, জাহাজে থাকা টেলিগ্রাফ হল এমন একটি যন্ত্র যা প্রাচীন আমলে নাবিকরা জাহাজের গতিবেগ নির্ধারণ করার জন্য ব্যবহার করতেন। স্ক্রিনশট দেখুন--
এর সূত্র ধরে সার্চ করার পর, স্টক ছবির আরেকটি সাইট Alamy-তেও ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে একে ফুজিকাওয়া মারু'র টেলিগ্রাফ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। একই টেলিগ্রাফটি দেখা গেছে গেটি ইমেজ সংস্থার একটি ভিডিওতেও।
দ্বিতীয় ছবি
এই ছবির একটিতে পানির নিচে শায়িত একটি মূর্তি দেখা যাচ্ছে যাকে শ্রীকৃষ্ণ বলে দাবি করা হচ্ছে। পোস্টটিতে এই মুর্তির দুটি ছবি আছে। সার্চ করার পর, সোজা মুর্তির ছবিটি Hoaxorfact.com নামের একট সাইটে খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে মুর্তিটি ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপের Pemuteran Bio Rock এর ১৫ মিটার পানির নিচে তামান পুরা (Taman Pura) হিন্দু মন্দিরের বিষ্ণু মূর্তি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি পর্যটকদের জন্য পানির নিচে তৈরি করা স্থাপনা। সার্চ কার পর দেখা যায় শায়িত মুর্তিটিও একই স্থানের। দেখুন--
তৃতীয় ছবি
এই ভাঙ্গা মন্দিরের চূড়ার অংশের ছবিটি গোপুরাম মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ। ২০০৪ সালে তামিলনাড়ুতে সুনামির পর স্থাপনাটির এই অবস্থা হয়েছিল, যা পূর্ব করমণ্ডল উপকূলে পাওয়া যায়। ছবির সাইট 'ফ্লিকার'এ বালা গোপালন নামের এক ব্যক্তি ছবিটি পোস্ট করে ২০০৬ সালের ৬ এপ্রিল এটি তোলা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। স্ক্রিনশট দেখুন--
চতুর্থ ছবি
দ্বারকার সিংহদ্বার দাবি করা এই ছবিটি রিভার্স সার্চ করার পর দেখা যায়, ছবিটি নেপচুন মেমোরিয়াল মিউজিয়ামের একটি মূর্তি। ফ্লোরিডার জলের তলার নেপচুন মিউজিয়ামে এই ধরণের মূর্তি আছে। নেপচুন মেমোরিয়াল রীফ হল পানির নিচের একটি সমাধি স্থল। বুম নেপচুন মেমোরিয়াল রীফের সঙ্গে যোগাযোগ করলে, ছবিটা তাদের রীফের বলেই নিশ্চিত করেছেন।
প্রসঙ্গত দ্বারকা হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান। তারা বিশ্বাস করেন, ভারতের গুজরাট রাজ্যের পশ্চিম উপকূলে শ্রীকৃষ্ণ ওই শহরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আধুনিক দ্বারকা শহর গুজরাটের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। তবে বুম বাংলাদেশ এই চারটি ছাড়া বাকি ছবিগুলোর উৎস যাচাই করেনি।
ভাইরাল পোস্টটির কিছু ছবি বুম লাইভ বাংলা আগেই যাচাই করেছে।
অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন জায়গার পরস্পর বিচ্ছিন্ন ছবি একত্র করে সাগরে তলিয়ে যাওয়া পৌরণিক দ্বারকা নগরী বলে দাবি করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।