সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একাধিক আইডি ও গ্রুপে বস্তাবন্দী কুকুর উদ্ধারের একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হচ্ছে, এসব কুকুর ঢাকায় কাচ্চি বিরিয়ানি তৈরির জন্য পাচার করা হচ্ছিল। এরকম কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৬ মে 'Shakh Faysal' নামে একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হয়, "রাজধানীতে কাচ্চি বিরানির নামে খাওয়ানো হচ্ছে কুত্তা বিরিয়ানি কাচ্চি বিরিয়ানি লাভারদের আমন্ত্রণ।🥘🥘🥘🦮🐕🦺🐈⬛🐈"। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ কুকুরগুলো কোথা থেকে আটক করা হয়েছে তা উল্লেখ না করলেও দাবি করা হচ্ছে রাজধানী ঢাকায় কাচ্চি বিরিয়ানি রান্নার জন্য এসব কুকুর আনার সময় তা আটক করা হয়।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি বিভ্রান্তিকর। ভিডিওটি ঢাকা কিংবা বাংলাদেশে কুকুর পাচারের সময় আটকের ঘটনার নয় বরং ভারতের আসাম রাজ্যের শিলচর জেলা থেকে মিজোরামে পাচারের সময় কুকুরগুলোকে উদ্ধার ঘটনার। বিক্রির উদ্দেশ্যে বস্তাবন্দী করে ১৪ টি কুকুর নিয়ে যাওয়ার সময়ে 'আশ্রয়' নামে একটি পশুপ্রেমী সংগঠনের সহায়তায় ৩ ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ।
আলোচ্য ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, "লাইভ হইছি। আমাদের আশ্রয়ের যারা ওয়েলউইশার আছেন, তারারে আরেকটা সুখবর। ... এখানে ১৪ নাম্বার অফ ডগজ আছে এখানে। পাপিজ এবং এডাল্ট ডগজ সব মিলাইয়া। সেম আমাদের করিমগঞ্জে যেমন হইছিলো কুকুর পাচারের সময়।" ভিডিওটিতে কুকুর পাচারের অভিযোগে আটক তিন ব্যক্তির ভিতরে দুই ব্যক্তির বাড়ি আলগাপুরে বলে জানাতে দেখা যায়। এছাড়াও কুকুরগুলোকে পাচারে ব্যবহৃত AS-10E-2913 নামের একটি সাদা মাইক্রোবাসও দেখতে পাওয়া যায়।
উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ভারতের আসামভিত্তিক অনলাইন পোর্টাল সাময়িক প্রসঙ্গ অনলাইনে গত ২৩ মে "মিজোরামে পাচারের পথে শিলচরে উদ্ধার ১৪ টি কুকুর, আটক ৩ পাচারকারী" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, মিজোরামে পাচারের সময়ে আসামের শিলচর রামনগর বাইপাস এলাকা থেকে ১৪ টি কুকুরসহ তিনজন পাচারকারীকে আটক করে পুলিশ। তিন ব্যক্তিই আসামের হাইলাকান্দি জেলার আলগাপুরের চন্ডিপুর এলাকার বাসিন্দা। একটি গাড়িতে করে কুকুর পাচার করা হচ্ছে এমন খবর পায় 'আশ্রয়' নামে আসামের করিমগঞ্জ জেলাভিত্তিক এক পশুপ্রেমী সংগঠনের সদস্যরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল শিলচরে এসে তারা স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় কুকুরগুলো উদ্ধার করেন। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও, আসামভিত্তিক অনলাইন পোর্টাল কেআরসি টাইমস, দা আসাম ট্রিবিউন ও বারাক বুলেটিনের ওয়েবসাইটেও একই সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে আশ্রয় নামে ওই পশুপ্রেমী সংগঠনটির ফেসবুক পেজ 'Ashroy - Karimganj'-এ গিয়ে গত ২২ মে করা একটি লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির ৯ সেকেন্ড থেকে দেখানো ভিডিওর সাথে আলোচ্য ভিডিওটির সাথে হুবহু মিল রয়েছে। স্ক্রিনশট দেখুন--
আবার, ওই একই ফেসবুক পেজে গত ২৪ মে করা আরেকটি ভিডিও পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওতে দেখানো দৃশ্যের সাথেও আলোচ্য ভিডিওটির দৃশ্যের মিল রয়েছে। পোস্টের ক্যাপশনে লেখা থাকতে দেখা যায়, "ANOTHER BATH OF - 14 N. On 22nd Of May, A successful rescue was executed by Team ASHROY, Rescuing 14 numbers of dogs, which was getting smuggled to Mizoram. "We will be sharing pictures of all the dogs soon, They are in good condition and receiving treatment. We are committed to ensuring they have a good quality of life. Last but not least, the spirit that team Sporsho - Touch The Animals , has shown is unforgettable. We hope for the opportunity to work together again in the near future. Thank you once again." #be_the_reason_for_a_smile #ashroyngo"। অর্থাৎ গত ২২ মে আশ্রয়ের সদস্যরা মিজোরামে পাচার হওয়ার আগমহূর্তে ১৪ টি কুকুর উদ্ধার করে। স্পর্শ- টাচ দা এনিমেল নামে আরেকটি সংগঠনের সাথে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তারা কুকুরগুলোকে উদ্ধার করে। ফেসবুক পোস্টটি দেখুন--
অর্থাৎ ভারতের আসাম রাজ্যের পুলিশের সহায়তায় আশ্রয় নামে একটি সংগঠন ১৪ টি কুকুর দেশটির মিজোরাম রাজ্যে পাচারের আগমুহূর্তে উদ্ধার করে। ভিডিওটি বাংলাদেশের নয় এবং রাজধানী ঢাকায় কাচ্চি বিরিয়ানি রান্নার উদ্দেশ্যে এসব কুকুর পাচার করা হচ্ছিল না।
সুতরাং ভারতের আসাম রাজ্য থেকে মিজোরাম রাজ্যে পাচারকালে উদ্ধার হওয়া কুকুরের ভিডিওকে বাংলাদেশের ঢাকায় কাচ্চি রান্নার জন্য পাচার হচ্ছিল বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।