সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দৃশ্যত দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণের একটি প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট পোস্ট করা হচ্ছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে গত ১০ এপ্রিল "ঈদের সালামি চাইতে গিয়ে প্রেম অত:পর বিয়ে" শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে প্রথম আলো। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ১৭ জুন 'NUB Short Stories' নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে এমন একটি পোস্ট করে লেখা হয়, "সালামি নিয়ে বসে আছি সকাল থেকে কেও চাইলো না"। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের স্ক্রিনশটটি এডিটেড। প্রথম আলো অনলাইনের একটি প্রতিবেদনের এএমপি ভার্সনের একটি স্ক্রিনশটকে সম্পাদনা করে বিভ্রান্তিকর তথ্য যুক্ত করে আলোচ্য স্ক্রিনশট/ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।
কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে আলোচ্য শিরোনামের কোনো সংবাদ বা সংবাদের আর্কাইভ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি অন্য গণমাধ্যমেও এমন খবর খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, লেখক হিসেবে 'তোজিস্লাম' নাম উল্লেখ থাকলেও এই নামের কোনো লেখক বা তাঁর কোনো লেখা প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে সার্চ করে পাওয়া যায়নি।
এদিকে স্ক্রিনশটে উল্লিখিত প্রকাশের তারিখ ২০২৪ সালের ১০ এপ্রিল অনুযায়ী সার্চ করে প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে এই তারিখে 'সালামি' শব্দযুক্ত শিরোনামে অভিনেতা ইরেশ যাকের এর একটি স্মৃতিচারণমূলক লেখা (সংবাদ নয়) পাওয়া যায়। লেখাটির 'এএমপি' সংস্করণের স্ক্রিনশটের (বামে) সাথে ফেসবুকে প্রচারিত স্ক্রিনশটটির (ডানে) পাশাপাশি তুলনা দেখুন--
প্রাপ্ত ফলাফল থেকে বোঝা যায়, আলোচ্য স্ক্রিনশটে (ডানে) প্রথম আলোর যেকোনো একটি লেখা বা প্রতিবেদনের এএমপি সংস্করণের স্ক্রিনশট থেকে ফিচার ইমেজের স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে। পাশাপাশি লেখার ক্যাটাগরি, অথর নেম ও শিরোনাম সম্পাদনা করা হয়েছে। এছাড়া, আলোচ্য স্ক্রিনশটে 'অতঃপর' বানানটি ভুলভাবে লেখা হয়েছে, সাধারণত বানান ভুল থাকা এডিটেড ও ভুয়া খবরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
এদিকে ইরেশ যাকেরের একই লেখা স্বাভাবিক ভিউতে পড়লে এর ইন্টারফেসের সাথে ফেসবুকে প্রচারিত আলোচ্য স্ক্রিনশটের সাথে বেশকিছু অমিল দেখা যায়। এর কারণ এএমপি ভার্সনের ভিউ'য়ের ইন্টারফেসের ভিন্নতা। সাধারণত একই প্রতিবেদনের স্বাভাবিক ভিউ এবং এএমপি ভিউ দেখতে ভিন্ন রকম হয়। এছাড়া দুই সংস্করণে অথর নেম এবং কিছুক্ষেত্রে সময়েরও পরিবর্তন দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ প্রথম আলোর আরো একটি লেখার স্বাভাবিক ভিউ দেখুন এখানে এবং এএমপি ভিউ দেখুন এখানে। এখানে দুই সংস্করণে অথর এর নামে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।
ইরেশ যাকেরের লেখাটির এএমপি ভিউ (বামে) ও স্বাভাবিক ভিউ (ডানে) এর মধ্যে পার্থক্য দেখুন পাশাপাশি--
যেহেতু দুই আলাদা সংস্করণের ইন্টারফেস ভিন্ন হয়, তাই এখানে 'সালামি' শব্দের ফন্ট পরিবর্তন করা হয়েছে বলে মনে হলেও মূলত এএমপি প্রজেক্টের কারণে বিশেষ করে মোবাইল ভার্সনে ফন্টের এমন পরিবর্তন দেখা যায়। এমনকি প্রথম আলোর লোগো একটি সংস্করণে মধ্যখানে হলেও অন্য সংস্করণে উপরের বাম দিকে রয়েছে। পাশাপাশি এএমপি সংস্করণে বাংলা ভাষার প্রতিবেদন হওয়া সত্ত্বেও প্রকাশের তারিখ ইংরেজিতে দেখা যাচ্ছে। এছাড়াও দুই ভিন্ন সংস্করণে লেখাটি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারের জন্য ওয়েবসাইটে প্লাগ-ইন করা আইকনেও ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত ইরেশ যাকেরের একই লেখা প্রথমে বর্ণিল ঈদ ২০২৪ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছিল। আলোচ্য স্ক্রিনশটের ফিচার ইমেজটি ব্যবহার করে প্রথম আলোতে প্রকাশিত লেখা/প্রতিবেদনের বিষয়ে সার্চ করেও প্রচারিত শিরোনামের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে প্রথম আলোর ভিন্ন একাধিক প্রতিবেদনের সাথে ছবিটি ফিচার ইমেজ হিসেবে ব্যবহার হতে দেখা গেছে। দেখুন--
অর্থাৎ প্রথম আলো অনলাইনের একটি লেখা বা প্রতিবেদনের এএমপি সংস্করণের স্ক্রিনশট এডিট করে আলোচ্য স্ক্রিনশট বা ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।
সুতরাং সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে প্রথম আলোর একটি লেখার স্ক্রিনশট এডিট করে বিভ্রান্তিকর তথ্য সহ প্রচার করা হচ্ছে।