সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লেখা যুক্ত নোটিশের একটি গ্রাফিক কার্ড পোস্ট করে বলা হচ্ছে, ক্লাস চলাকালীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে আড্ডা দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে। পোস্টটি ইনস্টাগ্রামে দেখুন এখানে ও এখানে।
গত ১৭ এপ্রিল 'Kamal Uddin' নামের অ্যাকাউন্ট থেকে একটি নোটিশের গ্রাফিক কার্ড পোস্ট করা হয়। পোস্টে বলা হয়, "পুলিশের আরো একটি সুন্দর উদ্যেগ- অভিনন্দন। তবে বখাটেরা স্কুল গেইটে এখন অবস্থান নেয় না, নেয় গেইট সম্মূখে পার্কিং করা সিএনজি,সেলস গাড়ি ও পিকাপের আড়ালে, ইয়াবাও বেচা হল - হিরোগিরিও হল। এ যেমন রথও দেখা হল কলাও বেচা হল"। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
'বাংলাদেশ পুলিশ', 'জরুরি নোটিশ' শিরোনামে গ্রাফিক কার্ডে লেখা রয়েছে, "এতদ্বারা সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার যাওয়ার সময় / ছটির সময়ে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার আশেপাশে বা দোকানে বসে আড্ডা দেওয়া এবং রাস্তা ঘাটে অহেতুক ঘোরাফেরা করা সম্পূর্ণ নিষেধ করা হচ্ছে। ছাত্র ছাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য আমরা বাংলাদেশ পুলিশ আজ থেকে যদি স্কুল, কলেজ এবং মাদ্রাসার সামনে কোন বখাটে ছেলে পাওয়া যায়, তাহলে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হইবে- বাংলাদেশ পুলিশ।"
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি বিভ্রান্তিকর। এটি বাংলাদেশ পুলিশের সদর দপ্তর থেকে প্রকাশিত সারা দেশের জন্য দেওয়া কোনো নির্দেশনা নয় বরং জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর থানায় স্থানীয় পুলিশের জারি করা নির্দেশনা। সুতরাং এই নির্দেশনাটি সারা বাংলাদেশের সব থানার জন্য প্রযোজ্য নয়।
বাংলাদেশ পুলিশের অফিশিয়াল সাইটে ও ভেরিফাইড সামাজিক মাধ্যমে অনুসন্ধান করে এমন কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে কি-ওয়ার্ড সার্চ এর মাধ্যমে বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম 'চ্যানেল ২৪' এর অনলাইন সংস্করণে ২০২২ সালের ১০ জুন "স্কুল-কলেজের পাশে বখাটেদের পেলেই গ্রেপ্তার" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
এতে উল্লেখ করা হয়, টাঙ্গাইলে উঠতি বয়সী তরুণ-যুবক ও বখাটেদের দলবদ্ধ হয়ে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্রীদের যাওয়া-আসার পথে প্রেমের প্রস্তাব এবং কু-প্রস্তাব দেওয়া এবং তাতে রাজি না হলেই অপহরণ করার কাজে জড়িয়ে পড়ছে। বখাটেদের এমন কর্মকাণ্ড ভূঞাপুর থানা পুলিশের নজরে এলে এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড রোধে ও গণসচেতনতার লক্ষ্যে আলোচ্য এই উদ্যোগটি নিয়েছে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর থানা পুলিশ (সংক্ষেপিত)। প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় স্থানীয় থানা পুলিশ কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এমন নির্দেশনা দিয়েছেন।
পাশাপাশি, কি-ওয়ার্ড সার্চ এর মাধ্যমে দৈনিক পত্রিকা যুগান্তরের অনলাইন সংস্করণে ২০২২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর "শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে ঘোরাফেরা-আড্ডা নিষিদ্ধ!" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এতে বলা হয়, স্থানীয় বখে যাওয়া তরুণদের সচেতন করার জন্য জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে বা দোকানে বসে আড্ডা দেওয়া ও রাস্তাঘাটে অহেতুক ঘোরাফেরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে পুলিশ। প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট দেখুন--
এদিকে আলোচ্য নির্দেশনাটি চট্টগ্রামের লোহাগড়া থানার বরাতে ফেসবুকে প্রচার হলে অনলাইন সংবাদ মাধ্যম 'দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস'কে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকারিয়া রহমান জিকু জানান, "ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টটি ভুয়া। এ ধরনের কোন সর্তকতামূলক বার্তা থানার পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি"।
অর্থাৎ নির্দেশনাটি জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর থানায় শুধুমাত্র সেখানকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য স্থানীয় পুলিশ জারি করেছে, সারাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশ পুলিশ কেন্দ্রীয়ভাবে এই নোটিশ জারি করেনি।
সুতরাং কয়েকটি থানায় স্থানীয়ভাবে পুলিশের জারি করা একটি নির্দেশনাকে বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে।