সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক পেজ, আইডি ও সংবাদমাধ্যমে লোহার খাঁচা দিয়ে ঢেকে তালা লাগিয়ে দেয়া কবরের একটি ছবি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, পাকিস্তানে বাবা-মায়েরা তাদের মৃত কন্যাদের ধর্ষণের হাত থেকে রক্ষা করতে কবর লোহার খাঁচা দিয়ে ঢেকে দিয়ে তালা লাগিয়ে দিচ্ছেন, ছবিটি উক্ত ঘটনার। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে খবরটির সূত্র হিসেবে পাকিস্তানের ডেইলি টাইমসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ছবিটির কোনো সূত্র বা বিস্তারিত বিবরণ খবরগুলোতে নেই। এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ৩০ এপ্রিল বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাভিশনের অনলাইন সংস্করণে ছবিটি ব্যবহার করে "মেয়েদের কবরে তালা দিচ্ছেন পাকিস্তানি বাবা-মায়েরা!" শিরোনামে খবরটি প্রকাশিত হয়। উক্ত খবরের লিংকটি ফেসবুকে পোস্ট করে লেখা হয়, "শুনলে অবিশ্বাস্য বলে মনে হলেও পাকিস্তানে ঘটছে এমনটাই"। পোস্টের স্ক্রিনশটটি দেখুন--
ছবিটি প্রকাশ করেছে এমন কিছু সংবাদমাধ্যমের মধ্যে বাংলাভিশন অনলাইন ছাড়াও আছে, নিউজ২৪ অনলাইন, সময়ের আলো অনলাইন, সংবাদ প্রকাশ।
ফ্যাক্টচেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, কবরের এই ছবিটি পাকিস্তানের নয় বরং ভারতের হায়দরাবাদের মাদন্নোপেট এলাকার দারাব জং কলোনির একটি কবরস্থানের।
কি ওয়ার্ড ধরে সার্চ করার পর, পাকিস্তানের ডেইলি টাইমসে "Unsafe in Graves" শিরোনামে একটি সম্পাদকীয় খুঁজে পাওয়া যায়, যা ২৮ এপ্রিল প্রকাশিত হয়েছে। তবে ডেইলি টাইমসের সম্পাদকীয়তে এমন কোনো ছবি নেই।
ছবিটি রিভার্স সার্চ করলে, ভারতের হায়দরাবাদ শহর থেকে পরিচালিত সংবাদমাধ্যম 'Telangana Today'-এর একটি প্রতিবেদনে ছবিটি যুক্ত করতে দেখা যায়।"Grave with iron grille in viral photo actually from Hyderabad, not Pakistan" শিরোনামে ১ মে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ছবিটি ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের রাজধানী হায়দরাবাদের একটি এলাকার।
এর সূত্রধরে সার্চ করলে, ভারতীয় ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা অল্ট নিউজের "Media misreport: Viral photo of grave with iron grille is from Hyderabad, not Pakistan" শিরোনামে ৩০ এপ্রিল প্রকাশিত একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। অল্ট নিউজ সবুজ খাঁচায় ঘেরা কবরের ছবিটিকে তারা ভারতের হায়দরাবাদের বলে চিহ্নিত করেছে। অল্ট নিউজের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ছবিটি হায়দরাবাদের মাদন্নোপেট এলাকার দারাব জং কলোনির স্থানীয় মসজিদ সালার মুলক সংলগ্ন একটি কবরস্থানের।
অল্টনিউজ কবর সংলগ্ন মসজিদের মুয়াজ্জিন মুক্তার সাহেবের সাথে কথা বললে তিনি জানান, অনুমতি ছাড়া পুরোনো কবরের উপর লাশ দাফন করার কিছু ঘটনার প্রেক্ষিতে কেউ যেন এভাবে এক লাশের ওপর আরেক লাশ দাফন করতে না পারে সেজন্য পরিবারগুলো সেখানে গ্রিল লাগিয়ে দিয়েছে। ওই মুয়াজ্জিন আরও জানান, সবুজ খাঁচায় আটকানো কবরটি একজন সত্তোর্ধ্ব নারীর।
হায়দরাবাদের বাসিন্দা 'Jaleelraja Abu AbdulHadee' সরাসরি কবরস্থানে গিয়ে সেখানের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন। তিনিও নিশ্চিত করেন ছবিটি পাকিস্তানের নয় বরং ভারতের হায়দরাবাদ শহরেরই।
আলোচ্য কবরটি নিয়ে ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে TNANews নামের তেলেঙ্গানার একটি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমও। এছাড়া গুগল ম্যাপে ওই কবরের ছবিটিও খুঁজে পাওয়া যায়।
অর্থাৎ লোহার খাঁচা দিয়ে আটকানো ছবিটি পাকিস্তানের নয় বরং ভারতের হায়দরাবাদ শহরের।
সুতরাং ভারতের হায়দরাবাদ শহরের একটি কবরের ছবিকে পাকিস্তানে মৃতদেহ ধর্ষণ বা নেক্রোফিলিয়া সম্পর্কিত খবরের সাথে জুড়ে প্রচার করা হচ্ছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও একাধিক ফেসবুক একাউন্টে, যা বিভ্রান্তিকর।