মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বন্দী স্পাইআই নামক ম্যালওয়্যারের সহনির্মাতা আলেজরিয়ান হ্যাকার হামজা বেনদেলাজকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে এরকম একটি তথ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়ানো পোস্টে হামজা বেনদেলাজের বলে প্রকাশ্যে ফাঁসির দড়িতে ঝুলন্ত দুটি ছবিও সংযুক্ত রয়েছে। 'শেষ থেকে শুরু' নামক একটি ফেসবুক পেজ থেকে গত ১৪ আগস্ট দেয়া একটি পোস্টে বলা হয়-
''#এই সেই 'হামজা বেনদেলাজ',
যিনি ২১৭ টি ব্যাংক থেকে ৪০ কোটি ডলার হ্যাক করেন, এবং আফ্রিকা ও ফিলিস্তিনে অনাহারে অর্ধাহারে মরে যাওয়ার উপক্রম মানুষদের মাঝে বিলিয়ে দেন! আদালতে তাঁর ফাঁসির রায় হলে অবশেষে হাসি মুখে ফাঁসিতে ঝুলে পড়েন! আদালতে তার বক্তব্য পরিস্কার ছিল-"আমি কোন পাপ করিনি, গরিবের পেট চাঁপা দিয়ে সমাজের দুর্নীতিবাজরা যে পয়সা ব্যাংক এ জমা রেখেছিল আমি তা গরিবের পেঠেই পৌঁছালাম, এটি আমার অপরাধ?
স্যালুট হামজা বেনদেলাজ,
আজীবন বিড়ালের মত বেঁচে থাকার চেয়ে,
একটা দিন বাঘ হয়ে মৃত্যু বরণ করা উত্তম
সংগৃহীত''
ফ্যাক্ট-চেক:
অনুসন্ধানে দেখা যায় বিষয়টি হুবহু এভাবে এর আগেও বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল।
প্রকৃতপক্ষে হামজা বেনদেলাজের ফাঁসির রায় এবং তা কার্যকর হওয়ার খবরটি সত্য নয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, হামজা বেনদেলাজ আলোচিত ম্যালওয়্যার স্পাইআই এর সহনির্মাতা। সহযোগী রাশিয়ান হ্যাকার আলেকজান্ডার আন্দ্রেভিচ পানিন এর সাথে মিলে তিনি স্পাইআই দিয়ে দুইশরও অধিক আমেরিকান ব্যাংকসহ বিশ্বের অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১.৪ মিলিয়ন কম্পিউটার হ্যাক করে অর্থ চুরি করেন। চুরি করা অর্থের পরিমাণ প্রায় ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বলে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে এসেছে।
তবে এই টাকা তিনি আফ্রিকা ও ফিলিস্তিনিদের সহযোগীতায় দাতব্য সংস্থাং ব্যয় করার কথা সামাজিক মাধ্যমসহ কিছু অনলাইন প্রতিবেদনে আসলেও মার্কিন আদালতের ডকুমেন্টে এরকম কিছু বলা হয়নি। হামজা বেনদেলাজের ভক্ত ও সমর্থক অনেকে তার গ্রেফতারের পর ফিলিস্তিনে তার সহযোগীতার কথা উল্লেখ করে সামাজিক মাধ্যমে তার পক্ষে ক্যাম্পেইন চালান।
এফবিআই এর ওয়ান্টেড এই হ্যাকারকে ৩ বছর ট্র্যাক করার পর ২০১৩ সালের জানুয়ারীতে মালয়েশিয়া থেকে ব্যাংকক হয়ে কায়রো যাওয়ার সময় ব্যাংককের সুবর্নভুমি বিমানবন্দর থেকে থাই পুলিশ গ্রেফতার করে। সেবছরই মে মাসে তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ করা হয় এবং ২০১৫ এর জুনে আদালতে দোষী সাব্যস্ত হন। ২০১৬ সালে তাকে ১৫ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। বর্তমানে তিনি বন্দী হিসেবেই আছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবর দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
অন্যদিকে হামজার ফাঁসির ছবি হিসেবে ভাইরাল হওয়া দুটি ছবির রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা যায় তা ইরানের তেহরানে বিচারককে হত্যার অভিযোগে প্রকাশ্য জনসম্মুখে ফাঁসি দেয়া এক যুবকের ছবি। মাজিদ কাভুসিফার নামক এই ইরানি নাগরিক ও তার ভাতিজা হোসেন কাভুসিফারকে বিচারক হাসান মোগাদ্দাসকে হত্যার দায়ে ২০০৭ সালে তেহরানের রাজপথে ফাঁসি দেয়া হয়। বিবিসি ও রয়টার্সে ছবিসহ এ সংক্রান্ত খবর দেখুন।
সূতরাং হামজা বেনদেলাজের ফাঁসিও হয়নি এবং ছবিও তার নয়।