সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হচ্ছে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে ফেরার পথে বিমানবন্দরে নামার পর ভক্তদের পিটুনি খেয়ে পলালো বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। অর্থাৎ দাবি করা হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ওপর হামলা চালিয়েছে ক্ষুব্ধ ক্রিকেট ভক্তরা এবং ছবি ও ভিডিওটি ওই হামলার ঘটনার। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
আজ ২৭ জুন 'BD News Point' নামের পেজ থেকে ভিডিওটি পোস্ট করে লেখা হয়, "বিমান থেকে নেমে ভক্তদের পিটুনি দৌড়ে পলালো সাকিবরা! ক্ষেপেছে ভক্তরা দেশে আসতেই লিটন শন্তদের ধোলাই"। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। বিশ্বকাপে নিজেদের ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এখনও দেশে ফেরেনি। শুক্রবার তাদের দেশে ফেরার কথা রয়েছে। এছাড়াও সাকিব বা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কারো উপর কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের দেশে ফেরার বিষয়ে কি-ওয়ার্ড সার্চ এর মাধ্যমে অনলাইন সংবাদমাধ্যম 'ঢাকাপোস্ট'-এ আজ ২৭ জুন "বিশ্বকাপ অভিযান শেষে সকালে দেশে ফিরছে টাইগাররা" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এতে উল্লেখ করা হয়, আগামীকাল ২৮ জুন (শুক্রবার) সকাল ৮ টায় দেশে ফেরার কথা রয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সদস্যদের। প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট দেখুন--
পাশাপাশি, 'একুশে টেলিভিশন' এর অনলাইন ভার্শনে গত ২৬ জুন "শুক্রবার দেশে ফিরছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এতে উল্লেখ করা হয়, যুক্তরাষ্ট্র এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যর্থ মিশন শেষে শুক্রবার দেশে ফেরার কথা রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের। স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ পুরো বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এখনো দেশে ফেরেনি। তবে জাগোনিউজের এক প্রতিবেদনে 'নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রের খবর' দাবি করে বলা হয়েছে, দলকে রেখে গোপনে দেশে ফিরেছেন সাকিব। যদিও সাকিবের দেশে ফেরার বিষয়টি যাচাই করা যায়নি। তবে অনুসন্ধানে সাকিবের উপর হামলার কোনো সংবাদ কিংবা তথ্য গ্রহণযোগ্য কোনো মাধ্যমে পাওয়া যায়নি।
যেহেতু পুরো বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এখনো দেশেই ফেরেনি, সেহেতু আলোচ্য পোস্টে উল্লিখিত 'সাকিবরা' তথা বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বিমানবন্দরে ভক্তদের হামলা শিকার হওয়ার দাবিটি অবান্তর ও অবাস্তব।
এদিকে, আলোচ্য ভিডিওটির হামলার অংশের কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ২০২২ সালের ২৫ আগস্ট অনলাইন সংবাদ মাধ্যম 'ঢাকা পোস্ট' এর ইউটিউব চ্যানেলে 'মাইক্রোবাস ভাঙচুর করলেন হরতাল সমর্থকরা' শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটির ২৯ সেকেন্ড থেকে প্রচারিত দৃশ্য আলোচ্য পোস্টের শুরুতে প্রচারিত দৃশ্যের সাথে মিলে যায়। ঢাকা পোস্টের ইউটিউবে পাওয়া ভিডিওর স্থিরচিত্র (বামে) ও সামাজিক মাধ্যমে ক্রিকেটারদের উপর হামলার দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর স্থিরচিত্রের মধ্যকার (ডানে) পাশাপাশি মিল দেখুন--
এছাড়া, আলোচ্য ভিডিওটিতে গাড়িতে হামলার একটি স্থিরচিত্র ক্রিকেটারদের উপর হামলার ঘটনার দাবি করে প্রচার করা হয়। ওই ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি যুগান্তর পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে "ড. কামালের গাড়িবহরে হামলা মামলার প্রতিবেদন ২৮ ফেব্রুয়ারি" শিরোনামে প্রকাশিত খবরের সাথে ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ১৪ ডিসেম্বর ঢাকার মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানিয়ে ফেরার পথে তৎকালীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের গাড়ি বহরে হামলার ঘটনা ঘটে এবং ছবিটি ওই হামলার ঘটনার। স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের উপর ভক্তদের হামলার ঘটনার বলে প্রচার করা ভিডিওটি এবং স্থিরচিত্রটি পুরোনো রাজনৈতিক হামলার ঘটনার, ক্রিকেটের সাথে সম্পৃক্ত নয়।
সুতরাং সামাজিক মাধ্যমে বিমানবন্দরে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল হামলার শিকার হয়েছে মর্মে যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে, তা বিভ্রান্তিকর।