সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হচ্ছে, ভিডিওটির তরুণীর নাম হাদিস নাজাফি যিনি ইরানে চলমান হিজাববিরোধী প্রতিবাদে গিয়ে নিহত হন। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর 'সংশয় - Shongshoy' নামে একটি পেজে একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হয়, "এভাবেই ২০ বছর বয়সী হাদিস নাজাফি তার চুল বেঁধে ইরানের নারীদের চুলের ওপর জোরপূর্বক চাপিয়ে দেওয়া হিজাবের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছিলেন। কিছুক্ষণ পরেই পুলিশের ৬টি বুলেট তাকে ক্ষত-বিক্ষত করে। তিনি আর বেঁচে নেই। খোমেনি যতদিন বেঁচে থাকবে হাদিস নাজাফির মতো ইরানের স্বাধীনতাকামী নারীদের রক্তে দাগ তার হাতে ততদিন লেগে থাকবে। #IranProtests #HadisNajafi #MashaAmini"। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, পোস্টে করা দাবিটি সঠিক নয়। ইরানের হিজাববিরোধী প্রতিবাদে চুল বেঁধে এগিয়ে যাওয়ার ভিডিওটিতে দৃশ্যমান তরুণী আর নিহত তরুণী হাদিস নাজাফি এক ব্যক্তি নন। ভিডিওর ওই তরুণী নিজে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এবং নিহত হাদিস নাজাফির পরিবারও ভিডিওটির তরুণী হাদিস নাজাফি নয় বলে জানিয়েছেন।
ভিডিওটি থেকে কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে এবং কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ব্রিটিশ ভিত্তিক গণমাধ্যম বিবিসির ফার্সি ভাষার এডিশন বিবিসি ফার্সির ভেরিফায়েড টুইটার একাউন্ট 'BBC NEWS Farsi'-তে একটি টুইট খুঁজে পায়। ফার্সি ভাষায় লেখা টুইটের স্বয়ংক্রিয় ইংরেজি অনুবাদ "A woman who tied her hair became a symbol of the courage and bravery of the protesters in the streets of Iran, said in a video call to BBC Farsi that she is not Hadith Najafi, whose death was announced. In a video message, she says, "I fight for hadiths and mahsa." (চুল বেঁধে রাস্তায় নেমে আসা যেই মেয়েটি ইরানে সাহসিকতার প্রতীক হয়ে উঠেছেন, তিনি বিবিসি ফার্সিকে একটি ভিডিও কলে জানিয়েছেন যে, তিনি সদ্য মৃতঘোষিত হাদিস নাজাফি নন। ওই ভিডিও মেসেজে তিনি আরো বলেন, 'আমি হাদিস এবং মাহশার পক্ষে লড়াই করছি।')। টুইটার পোস্টটি দেখুন--
ওই পোস্টের উপরে ভিত্তি করে সার্চ করে 'observers.france24.com' নামে একটি ওয়েবসাইটে "How a video taken out of context made Hadis Najafi a symbol of repression in Iran" শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে আলোচ্য ভিডিওটির একটি কি-ফ্রেম খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে একটি স্ক্রিনশটে ওই ভিডিওটির মেয়েটিকেই চুলে পনিটেইল করতে দেখা যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, 'চুল পনিটেইল করে ভিডিও করা সেই মেয়েটি বিবিসিকে জানিয়েছেন যে, তিনি হাদিস নাজাফি নন।' স্ক্রিনশট দেখুন--
এদিকে, কি-ওয়ার্ড সার্চ করে 'radiozamaneh' নামে আরেকটি ওয়েবসাইটে 'Najafi hadith; "They pressured his father to say that she died due to brain death' (ফার্সি ভাষা থেকে স্বয়ংক্রিয় ইংরেজি অনুবাদ) শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। রেডিও জামানেহের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নিহত হাদিস নাজাফির বোন শিরিন নাজাফি জানিয়েছেন, তার বোনের হাত, চুল, পোশাক এবং চশমার সাথে মিল থাকায় ভিডিওর পনিটেইল গার্লকে তাঁরা ভুলক্রমে হাদিস নাজাফি বলে ধরে নিয়েছিলেন। স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ ভিডিওতে দৃশ্যমান বিক্ষুব্ধ তরুণী ওই বিক্ষোভে নিহত হাদিস নাজাফি নন।
প্রসঙ্গত কয়েকমাস ধরে ইরানে চলমান হিজাববিরোধী বিক্ষোভে গত ২১ সেপ্টেম্বর পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান হাদিস নাজাফি।
সুতরাং ইরানের হিজাববিরোধী প্রতিবাদে অংশ নেওয়া একজন বিক্ষোভকারীর করা একটি ভিডিওকে ওই প্রতিবাদস্থলে পুলিশের গুলিতে নিহত আরেকজন বিক্ষোভকারী হাদিস নাজাফির ভিডিও বলে প্রচারিত হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।