সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি পেজ ও গ্রুপে একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হচ্ছে, ভিডিওটি বাংলাদেশের একটি পূজামণ্ডপে বাইক বাজানোর কারণে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সাথে ইসলামী ছাত্রশিবিরের লোকদের বাকবিতণ্ডার সময়ে ধারণ করা হয়েছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ১৩ অক্টোবর 'Kamruzzaman Chowdhury' নামে একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হয়, "পূজা মন্ডপের মাইক বাজানোর জন্য মন্ডপের ভেতর প্রবেশ করে সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে ইসলামি ছাত্রশিবির 👣👣👣👣"। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। আলোচ্য ভিডিওটি বাংলাদেশের কোনো পূজামন্ডপ থেকে ধারণ করা হয়নি বরং কলকাতার গার্ডেনরিচে অবস্থিত একটি পূজামন্ডপে সেখানকার স্থানীয় মুসলিমদের সাথে পূজা চলাকালে বাদানূবাদের ঘটনায় ভিডিওটি ধারণ করা হয়।
আলোচ্য ভিডিওটির ব্যাপারে জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গত ১২ অক্টোবর 'সঞ্চারী ভট্টাচার্য' নামে পশ্চিমবঙ্গ থেকে পরিচালিত একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে আলোচ্য ভিডিওটি পোস্ট করে বলা হয়, "এই দৃশ্য বাংলাদেশের নয়, ভারত বর্ষের পশ্চিম বঙ্গের প্রাণকেন্দ্র কোলকাতার দৃশ্য। আজ কলকাতা ১৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে গার্ডেন রিচ, নুট বিহারী স্কুলের সামনে ভিলেজ রোডের একটি পূজা মন্ডপে জোরে মাইক বাজানোর কারণে দুর্গা পূজা মন্ডপের ভেতর প্রবেশ করে সম্প্রীতির বার্তা ছড়াচ্ছে।" ফেসবুক পোস্টটি দেখুন--
উক্ত ফেসবুক পোস্টের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গত ১১ অক্টোবর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্তমানবিরোধী রাজনৈতিক দল বিজেপির দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর পোস্ট করা একটি এক্স-পোস্টেও আলোচ্য ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। আলোচ্য ভিডিওটি পোস্ট করে ওই পোস্টে তিনি লেখেন, "ঘটনাটি ঘটেছে কলকাতার গার্ডেন রিচের নিউ বেঙ্গল স্পোর্টিং ক্লাবের পূজা প্যান্ডেলে। ইতিমধ্যেই গার্ডেন রিচ থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন আয়োজকরা। নিউ বেঙ্গল স্পোর্টিং ক্লাবের কর্মকর্তা ও সদস্যরাও ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সরবরাহ করেছেন।" এক্স পোস্টটি দেখুন--
পরবর্তীতে আরো কি-ওয়ার্ড সার্চ করে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার ওয়েবসাইটে গত ১১ অক্টোবর 'গার্ডেনরিচে মণ্ডপে ঢুকে পুজো বন্ধ করার হুমকি দুষ্কৃতীদের, দাবি শুভেন্দুর' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে আলোচ্য ভিডিওটির একটি স্ক্রিনশট যুক্ত করা হয়েছে এবং এই প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায় একই তথ্য। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত প্রতিবেদন থেকেও জানা যায় একই তথ্য।
পরবর্তীতে ইন্ডিয়া টুডের ওয়েবসাইটে গত ১২ অক্টোবর 'Dispute between 2 groups over music at Kolkata Durga Puja pandal, case filed' গার্ডেন রিচের ঘটনায় দায়ের করা এফআইআরের কপি খুঁজে পাওয়া যায়। এফআইআরের ছবিটি দেখুন--
অর্থাৎ আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। আলোচ্য ভিডিওটি বাংলাদেশের কোনো পূজামণ্ডপে ধারণ করা হয়নি এবং ভিডিওটির সাথে ছাত্রশিবিরের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ভিডিওটি কলকাতার গার্ডেনরিচ পূজামণ্ডপে ধারণ করা হয়।
সুতরাং ভারতের গার্ডেনরিচের ভিডিওকে বাংলাদেশের ভিডিও বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।