সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে পোস্ট করে বলা হচ্ছে, ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের শাশুড়ি সুধা মূর্তি তাঁর শৈশবে 'চিত্রা' নামে অনাথাশ্রমে পালিত হয়েছিলেন। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে।
গত ৪ নভেম্বর 'Swapybooks' নামে ফেসবুকের একটি পাবলিক গ্রুপে 'Tanzina Sultana' নামে একটি আইডি থেকে পোস্ট করে লেখা হয়,
"একবার একজন টিটিই (ট্রেন টিকিট পরীক্ষক) যিনি মুম্বাই থেকে বেঙ্গালুরুগামী ট্রেনে ডিউটিতে ছিলেন, তিনি একটি মেয়েকে ধরেছিলেন যে একটি সিটের নীচে লুকিয়ে ছিল। তার বয়স ছিল প্রায় 13 বা 14 বছর।
টিটিই মেয়েটিকে তার টিকিট দেখাতে বলে। মেয়েটি ইতস্তত করে উত্তর দিল যে, তাঁর কাছে টিকিট নেই।
TTE মেয়েটিকে অবিলম্বে ট্রেন থেকে নামতে বলে।
হঠাৎ পেছন থেকে একটা আওয়াজ বললো "আমি ওর জন্য টাকা দেব"। এটি ছিল শ্রীমতি ঊষা ভট্টাচার্যের কণ্ঠস্বর, যিনি পেশায় একজন কলেজের প্রভাষক ছিলেন। মিসেস ভট্টাচার্য মেয়েটির টিকিটের টাকা দিয়ে তাকে তাঁর কাছে বসতে অনুরোধ করলেন। সে তার নাম কি তাকে জিজ্ঞাসা করতে মেয়েটি উত্তর দিল "চিত্রা"।
"তুমি কোথায় যাচ্ছো?"
"আমার কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।" মেয়েটি বলল..
"তাহলে চলো আমার সাথে।" মিসেস ভট্টাচার্য তাকে বললেন। ব্যাঙ্গালোরে পৌঁছানোর পর, মিসেস ভট্টাচার্য মেয়েটিকে একটি এনজিও-র(স্চ্ছোসেবী সংস্থার) কাছে হস্তান্তর করেন, যত্ন নেওয়ার জন্য। পরে মিসেস.ভট্টাচার্য দিল্লিতে চলে যান এবং দুজনের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
প্রায় 20 বছর পর মিসেস ভট্টাচার্যকে সান ফ্রান্সিসকো (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) একটি কলেজে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
সে একটি রেস্তোরাঁয় ছিল, খাবার খাচ্ছিল। তিনি শেষ করার পরে তিনি বিলের জন্য জিজ্ঞাসা করেছিলেন, কিন্তু তাকে বলা হয়েছিল যে, বিল ইতিমধ্যেই পরিশোধ করা হয়েছে। যখন তিনি ফিরে গেলেন, তিনি দেখতে পেলেন একজন মহিলা তার স্বামীর সাথে তার দিকে তাকিয়ে হাসছেন। মিসেস ভট্টাচার্য দম্পতিকে জিজ্ঞাসা করলেন, "কেন আপনি আমার বিল পরিশোধ করলেন?"
যুবতী উত্তর দিল, "ম্যাম, মুম্বাই থেকে ব্যাঙ্গালোর ট্রেন যাত্রার জন্য আপনি আমার জন্য যে ভাড়া দিয়েছিলেন, তার তুলনায় আমি যে বিলটি আপনার জন্য দিয়েছি তা খুবই কম। উভয় মহিলার চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।
"ওহ চিত্রা... এটা তুমি...!!" খুশিতে অবাক হয়ে বললেন মিসেস ভট্টাচার্য।
পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে যুবতী বলল, "ম্যাম" আমার নাম এখন চিত্রা নয়। আমি সুধা মূর্তি। আর ইনি আমার স্বামী, বিশ্ববিখ্যাত সফটওয়্যার কোম্পানি ইনফোসিসের কর্ণধার নারায়ণ মূর্তি।"
বিস্মিত হবেন না. আমিই ইনফোসিস লিমিটেডের চেয়ারম্যানের স্ত্রী মিসেস সুধা মূর্তি, এবং আমার স্বামীই হলেন সেই মি. নারায়ণ মূর্তি, যিনি বহু মিলিয়ন ইনফোসিস সফটওয়্যার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
হ্যাঁ, অন্যদের কাছে আপনার সামান্য সাহায্যই তাদের পুরো জীবনটাই বদলে দিতে পারে!
"অনুগ্রহ করে যারা কষ্টে আছে, তাদের ভালো করা থেকে বিরত থাকবেন না, বিশেষ করে যখন এটি করার ক্ষমতা আপনার হাতে আছে"। আপনি সবার জন্য একটি সুন্দর সুখী জীবন কামনা করুন।
এই গল্পের একটু গভীরে যাই...
"অক্ষতা মূর্তি" এই দম্পতির মেয়ে, (যাঁর বাবা দুনিয়া কাঁপানো সফটওয়্যার কোম্পানি ইনফোসিসের কর্ণধার নারায়ণ মুর্তি এবং মা অনাথ আশ্রমে প্রতিপালিত চিত্রা, পরে নাম হয় সুধা মুর্তি) তিনি "ঋষি সুনাককে" বিয়ে করেছেন যিনি সম্প্রতি বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।
(আপনার সামান্য একটু সাহায্য একজন মানুষের ভাগ্য কতোটা বদলে দেবার ক্ষমতা রাখে, দয়া করে একটু চিন্তা করে দেখবেন)"।
ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন---
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের শাশুড়ি সুধা মূর্তির ব্যাপারে প্রচারিত গল্পটি সঠিক নয়। ফেসবুকে প্রচারিত গল্পটি সুধা মূর্তিরই লেখা একটি গল্পের প্লট।
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের শাশুড়ির সম্পর্কে জানতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে 'www.dnaindia.com' নামে একটি ওয়েবসাইটে "Meet Sudha Murty, mother-in-law of UK PM Rishi Sunak: Net worth of Narayana Murthy's wife stands at Rs 775 crore" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইনফোসিসের সম্পদের মালিক হিসেবে ঋষি সুনাকের শ্বশুর ও শাশুড়ি নারায়ণ মূর্তি ও সুধা মূর্তি ভারতের সবচেয়ে ধনী জুটিদের একটি। অর্থ্যাৎ ঋষি সুনাকের শাশুড়ির নাম সুধা মূর্তি যিনি ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিসের যৌথভাবে মালিক। স্ক্রিনশট দেখুন--
এরপরে, ইনফোসিসের যৌথ মালিক হিসেবে সুধা মূর্তির ব্যাপারে জানতে সার্চ করে leverageedu.com নামে একটি ব্লগসাইটে 'Sudha Murthy' শিরোনামের একটি নিবন্ধে লেখিকা ও উদ্যোক্তা, ভারতের সম্মানজনক পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত সুধা মূর্তির সম্পর্কে জানা যায়। সুধা মূর্তি ১৯৫০ সালে কর্ণাটকে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা পেশায় ছিলেন একজন সার্জন। ছোটবেলা থেকে পড়াশোনার পরিবেশ থাকাটা তাকে অসাধারণ কিছু করার ইচ্ছে জুগিয়েছিল। স্ক্রিনশট দেখুন--
ফেসবুকে প্রচারিত আলোচ্য গল্পটির উৎপত্তি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করতে গিয়ে সুধা মূর্তিরই লেখা 'Love on a Train' নামে একটি বইয়ের খোঁজ পাওয়া যায় বুকসেলার ওয়েবসাইট পেঙ্গুইনে। বইটির রিভিউ থেকে জানা যায়, সুধা মূর্তি দয়ার মাধ্যমে কীভাবে একটি জীবন বদলে যেতে পারে সেটা নিয়ে একটি গল্পের অবতারণা করেছেন। ওই গল্পের রিভিউতে বলা হয়েছে, চিত্রা নামে একটি শিশু টিকেট ছাড়াই ট্রেনে উঠে পড়ে। অনেক রাত হয়ে যাওয়ায় তিনি মেয়েটিকে একা ফেলে যেতে পারেননি। এই গল্পের মাধ্যমে সুধা মূর্তি দেখাতে চেয়েছেন, কোমলতা ও কিছু ছোট ছোট কাজের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি কীভাবে পৃথিবীকে পরিবর্তন করে দিতে পারেন। অর্থ্যাৎ সুধা মূর্তির লেখা একটি গল্পের কাহিনীর চরিত্র হলো 'চিত্রা' যাকে সুধা মূর্তির জীবনের কাহিনী বলে প্রচার করা হচ্ছে। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও গুডরিডসেও এই একই বইয়ের রিভিউ খুঁজে পাওয়া যায়।
অর্থ্যাৎ ইনফোসিসের যৌথ মালিক ও ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের শাশুড়ির লেখা একটি গল্পের চরিত্রকে তাঁর নিজের শৈশবের কাহিনী বলে প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।