সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক পেজ ও আইডি থেকে একটি ভিডিও ফুটেজ শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, সি.টি স্ক্যান, এমআরআই, এক্স-রের বিকল্প নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের দৃশ্য এটি। ভিডিওটি টেবিলের মতো দেখতে একটি স্ক্রিনে মানবদেহের থ্রিডি ছবি দেখা যায়। যা টাচস্ক্রিনে জুম ও রোটেট করে শরীরের পেশী, আলাদাভাবে জুম করে দেখা যাচ্ছে। এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি "Chintu Sarkari" নামের একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে ফুটেজটি পোস্ট করা হয়েছে যার ক্যাপশনে লেখা, " C.T Scan, MRI, X'RAYS বন্ধ হয়ে যাবে। নতুন ডিজিটাল প্রযুক্তি এসেছে। এখন ডাক্তাররা আপনার শরীরকে স্ক্রিনে লাইভ দেখতে পারবেন। এই ভিডিওটি দেখুন।"। স্ক্রিনশট দেখুন--
এর আগেও গত কয়েক বছরে ভিডিওটি একই দাবিতে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছিল।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ক্যাপশনে করা দাবিটি সঠিক নয়। ভিডিওতে দেখতে পাওয়া দৃশ্যটি নতুন কোনো রোগ নির্ণয়কারী প্রযুক্তির নয়। ভিডিওটি অ্যানাটমেজ টেবিলের, যা মূলত মেডিকেল ইম্যাজিং টেস্টের ছবি দিয়ে তৈরি থ্রিডি মডেলের পাঠ্যপদ্ধতি।
ভিডিওটি থেকে কি ফ্রেম নিয়ে সার্চ করার পর, 'NJ.com' নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে "Digital table lets students do virtual dissection" ক্যাপশনে যন্ত্রটি ব্যবহারের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়, যা ২০১৮ সালের ১৯ মে পোস্ট করা হয়েছে। হুবহু ভিডিও না হলেও এটি একই যন্ত্রের। ভিডিওর বিবরণ থেকে জানা যায়, যন্ত্রটির নাম অ্যানাটমেজ টেবিল। যা মূলত মেডিকেল শিক্ষার্থীদের শারীরবিদ্যা (অ্যানাটমি) ক্লাসে ব্যবহৃত হয়। যেমন এই ভিডিওটিতে নর্থ হান্টারডন হাইস্কুলের শিক্ষার্থীরা পাঠ নিচ্ছেন।
এই সূত্র ধরে সার্চ করার পর, 'www.Anatomage.com' নামের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক একটি মেডিকেল ইমেজিং সফটওয়্যার কোম্পানির ওয়েবসাইটে টেবিলটি সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ খুঁজে পাওয়া যায়। মূলত এই যন্ত্রটি মেডিকেল ইম্যাজিং টেস্টের ছবিকে থ্রিডি মডেলের মাধ্যমে ভার্চুয়াল ব্যবচ্ছেদ করে থাকে যা মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ভার্চুয়াল অ্যানাটমি বা শারীরবিদ্যা পাঠদানে ব্যবহৃত হয়। তবে এটি কোনো স্বতন্ত্র প্রযুক্তি নয় বরং এমআরআই বা সিটি স্ক্যান করার প্রচলিত প্রযুক্তির মাধ্যমে পাওয়া ছবির সাহায্যে পাওয়া থ্রিডি ইমেজ পদ্ধতিতে যন্ত্রটি ব্যবহৃত হয়।
এর আগে ভারতের সামাজিক মাধ্যমগুলোতে একই দাবি ছড়িয়ে পড়লে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অ্যানাটমেজের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপসের সিনিয়র ম্যানেজার জ্যাসন ম্যালে, অ্যানাটোমেজ টেবিল এক্স-রে কিংবা সিটি স্ক্যান বা এমআরআই-এর বিকল্প নয় বলে নিশ্চিত করেন। কারণ এটি নিজেই একধরণের ইমেজিং পদ্ধতি ব্যবহার করে।
অর্থাৎ অ্যানাটোমেজ টেবিল এক্স-রে কিংবা সিটি স্ক্যান বা এমআরআই-এর বিকল্প প্রযুক্তি নয়।
সুতরাং অ্যানাটোমেজ টেবিল নামে ভার্চুয়াল অ্যানাটমি বা শারীরবিদ্যা পাঠদানে ব্যবহৃত একটি যন্ত্রকে এক্স-রে কিংবা সিটি স্ক্যানের মত রোগ নির্ণয়কারী প্রযুক্তির বিকল্প দাবি করা হচ্ছে, যা সঠিক নয়।