সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম সময় টিভির লোগোযুক্ত একটি ফটোকার্ড পোস্ট করা হচ্ছে। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে ’চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ ও বাংলাদেশি হিন্দু নেতা 'চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ছিলেন ভারতের সমকামী কমিউনিটি LGBTQ এর সদস্য'। উক্ত ফটোকার্ডে তথ্যসূত্র হিসেবে ভারতীয় বাংলা চ্যানেল 'রিপাবলিক বাংলা'র নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এরকম কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৯ নভেম্বর 'Abdullah Bin Ahmed Tihamiun নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে আলোচ্য ফটোকার্ডটি পোস্ট করা হয়। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, সময় টেলিভিশন এ সংক্রান্ত সংবাদ কিংবা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম সময় টেলিভিশনের ফটোকার্ড ফরম্যাট ব্যবহার করে এটি তৈরি করা হয়েছে। আলোচ্য ফটোকার্ডটি সময় টেলিভিশনের তৈরি করা নয় বলে গণমাধ্যমটির অনলাইনের কো-অর্ডিনেটর সায়েদুল মাহমুদ মামুন বুম বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেছেন। এছাড়াও সূত্র হিসেবে 'রিপাবলিক বাংলা' এর নাম উল্লেখ করা হলেও এরকম কোনো সংবাদ রিপাবলিক বাংলা প্রচার করেনি বলে গণমাধ্যমটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
ফটোকার্ডে উল্লিখিত তারিখ (২৭ নভেম্বর) অনুযায়ী সময় টেলিভিশন এর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে সার্চ করে এ জাতীয় কোনো ফটোকার্ড গণমাধ্যমটির ফেসবুকে পাওয়া যায়নি। এমনকি সার্চ করে সময় সহ কোনো গণমাধ্যমের কোনো সংস্করণেই আলোচ্য দাবি সংক্রান্ত কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে গণমাধ্যমটির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত অন্য একটি ফটোকার্ডের সাথে আলোচ্য ফটোকার্ডটির কয়েকটি অসঙ্গতি পাওয়া যায়। আলোচ্য ফটোকার্ড (বামে) ও গণমাধ্যমটির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ডের (ডানে) পাশাপাশি তুলনা দেখুন--
ফটোকার্ডটির বিষয়ে জানতে চাইলে সময় টেলিভিশনের অনলাইনের কো-অর্ডিনেটর সায়েদুল মাহমুদ মামুন বুম বাংলাদেশকে জানান, "এই ধরনের কোনো সংবাদ ‘সময়’ এর কোনো প্ল্যাটফর্মে প্রচারিত বা প্রকাশিত হয়নি। ‘সময়’ এর লোগো এবং টেমপ্লেট ব্যবহার করে তৈরি করা এই ফটোকার্ডটি ভুয়া।"
সময়ের ফটোকার্ডে সূত্র হিসেবে ভারতীয় বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল 'রিপাবলিক বাংলা' এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এরকম কোনো সংবাদ প্রকাশ কিংবা প্রচার করেছে কিনা জানতে চাইলে গণমাধ্যমটির পক্ষ থেকে 'বুম বাংলা'কে জানানো হয়েছে, এমন কোনও খবর তাদের চ্যানেলের তরফ থেকে সম্প্রচার করা হয়নি।
অর্থাৎ, আলোচ্য ফটোকার্ডটি সময় টেলিভিশনের ফটোকার্ড ফরম্যাট ব্যবহার করে সম্পাদনার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানায় দায়ের করা একটি রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গত ২৫ নভেম্বর গ্রেফতার করা হয়। গত ৩১শে অক্টোবর বিএনপি নেতা ফিরোজ খান (পরে বহিষ্কৃত) মামলাটি করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ার পর নগরের নিউমার্কেট মোড়ের জিরো পয়েন্টে স্তম্ভের ওপর বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করে অবমাননা করে আগে টানানো জাতীয় পতাকার উপর সাম্প্রদায়িক ধর্মীয় গোষ্ঠী ইসকনের গেরুয়া রঙের ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন করে সেখানে স্থাপন করে দেয়।
সুতরাং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সময় টেলিভিশনের ফটোকার্ড ফরম্যাট সম্পাদনা করে ভুল তথ্য প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।