সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি ও পেজ থেকে কুমিল্লায় একই পরিবারের ৫ জনের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ সম্পর্কিত একটি খবর প্রচার করা হচ্ছে। পোস্টগুলো দেখুন, এখানে, এখানে, এখানে।
গত ২০ জুন "Rozina Rose" নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে অনলাইন পোর্টালের একটি লিংক পোস্ট করে বলা হয়, 'কুমিল্লাতে একই প'রিবারের ৫ জনের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ'। একইদিনে প্রকাশিত হুবহু একই রকম শিরোনামে প্রকাশ করা ওই অনলাইন পোর্টালের খবরটির এক পর্যায়ে লেখা হয়েছে, "প্র'ভা'ষ'ক অমর সিংহ (৫২) ও তার প'রি'বা'রে'র সদস্যরা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে স্ব'প'রি'বা'রে ইসলাম ধর্ম গ্র'হ'ণে আগ্রহী হন। এরই প্রেক্ষিতে গত ২৮ অক্টোবর কুমিল্লা বিজ্ঞ সি'নি'য়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে স্ব-শরীরে হা'জি'র হয়ে পরিবারের ৫ সদস্য ইসলাম গ্রহণ করে এ সময় তারা সি'নি'য়'র জুডিশিয়াল আ'দা'ল'তের ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ জালাল উদ্দিনের স'ম্মুখে হলফনামায় স্বাক্ষর ক'রে'ন।"
অর্থাৎ, খবরটিতে ঘটনাটি গত ২৮ অক্টোবরের ( ২০২০ সাল) বলে উল্লেখ থাকলেও, ডেটলাইনে প্রকাশের তারিখ ২০ জুন লেখা আছে।
ফলে একাধিক ফেসবুক ব্যবহারকারীকে ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের মনে করে মন্তব্য করতে দেখা গেছে।
ফ্যাক্ট চেক
ফেসবুকে প্রচার করা খবরটিতেই উল্লেখ আছে, ঘটনাটি গত অক্টোবর মাসের। অর্থাৎ এটি সাম্প্রতিক ঘটনা নয়।
একাধিক কি-ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করে দেখা গেছে, Comilla.tv নামের স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমে "লাকসামে একই পরিবারের ৫ জনের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ' শিরোনামে একই রকম একটি খবর পাওয়া যায়। ২০২০ সালের ১০ নভেম্বর প্রকাশিত এই খবরটি হুবহু কপি করে, কপিরাইট এড়াতে বাক্য ও শব্দের মাঝে অযাচিত যতি চিহ্ন ব্যবহার করে, সম্প্রতি তা বিভিন্ন পোর্টালে প্রকাশ করা হচ্ছে এবং এর লিংক সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে।
২০২০ সালের প্রকাশিত কুমিল্লা ডট টিভি-এর প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে,
"কুমিল্লার লাকসামে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী একই পরিবারের ৫ জন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। ধর্মান্তরিতরা হলেন লাকসাম পৌর শহরের মিস্ত্রী গ্রামের মৃত সুধীর চন্দ্র সিংহের ছেলে প্রভাষক অমর সিংহ (৫২), তার স্ত্রী শিবানী সিংহ (৩৭), ছেলে দীপ্ত সিংহ (১৭ বছর ৯ মাস), ইমন সিংহ (১৬ বছর ৮ মাস) ও মেয়ে পুষ্পিতা সিংহ (২ বছর)।
জানা যায়, প্রভাষক অমর সিংহ (৫২) ও তার পরিবারের সদস্যরা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে সপরিবারে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে আগ্রহী হন। এরই প্রেক্ষিতে ২৮ অক্টোবর কুমিল্লা বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে স্ব-শরীরে হাজির হয়ে পরিবারের ৫ সদস্য ইসলাম গ্রহণ করেন। এসময় তারা বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মুহা. জালাল উদ্দিন এর সম্মুখে হলফনামায় স্বাক্ষর করেন। হলফকারীকে শনাক্ত করেন আদালতের আইনজীবি অ্যাডভোকেট মো. শাহ আলম।
ধর্মান্তরিত হওয়ার পর অমর সিংহ এর পরিবর্তে ওমর ফারুক, তার স্ত্রী শিবানী সিংহের শিরিন সুলতানা, ছেলে দীপ্ত সিংহের আহমেদ দাউদ দীপ্ত, ইমন সিংহের আহমেদ ইমতিয়াজ ইমন ও মেয়ে পুষ্পিতা সিংহের নাম সামিয়া নুর রাখা হয়।
নওমুসলিম নাঙ্গলকোটের ভোলাইন বাজার কলেজের প্রভাষক ওমর ফারুক জানান, দীর্ঘদিন থেকে মুসলমানদের রীতি-নীতি পর্যালোচনা করে আল্লাহ এবং প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) প্রতি বিশ্বাস রেখে সপরিবারে বৌদ্ধ ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি। তিনি সকলের দোয়া চেয়েছেন।"
অর্থাৎ, গতবছরের পুরোনো একটি খবরকে হুবহু কপি করে ডেটলাইনে সাম্প্রতিক তারিখ বা সময় ব্যবহার করে একাধিক অনলাইন পোর্টালে প্রকাশ করা হয়েছে।
সুতরাং, একই পরিবারের ৫ জনের ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পুরানো খবর অপ্রাসঙ্গিকভাবে নতুন করে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।