সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ক্রিনশট পোস্ট করে বলা হচ্ছে, কোটা আন্দোলন চলাকালে এক হিন্দু মেয়েকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও তার ভিডিও করে উগ্র মৌলবাদী সন্ত্রাসীরা। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ১ আগস্ট 'Shree Proshanto Baral' নামের অ্যাকাউন্ট থেকে স্ক্রিনশটটি পোস্ট করা হয়। পোস্টে উল্লেখ করা হয়, "আরো যাও সরকার পতনের জন্য আন্দোলন ..........।" পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং এটি ২০২১ সালে ভারতে এক বাংলাদেশি পাচারের পর তাকে নির্যাতনের সময়ে ধারণ করা হয়।
ভিডিও থেকে কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ এর মাধ্যমে অনলাইন সংবাদমাধ্যম 'নিউজবাংলা ২৪'-এ ২০২১ সালের ৮ জুন "ভারতে তরুণীকে নির্যাতন: পাচারকারী চক্রের হোতার স্বীকারোক্তি" শিরোনামে আলোচ্য ভিডিওটির একটি স্থিরচিত্র যুক্ত করে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এতে উল্লেখ করা হয়, ছবিটি একটি ভিডিওর যেখানে বাংলাদেশি তরুণীকে ভারতের কেরালায় নৃশংস নির্যাতন করতে দেখা যায়। এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের হোতা আশরাফুল মণ্ডল ওরফে বস রাফিসহ তার সহযোগী আব্দুর রহমান শেখ ওরফে আরমান আদালতে দোষ স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট দেখুন--
পাশাপাশি, কি-ওয়ার্ড সার্চ এর মাধ্যমে বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম ‘নিউজ ২৪’-এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২১ সালের ২৮ মে "ভারতে টিকটক নারী নির্যাতনের ঘটনায় তোলপাড় | গুলিবিদ্ধ হৃদয়সহ গ্রেপ্তার ৬" শিরোনামে প্রকাশিত আলোচ্য ভিডিওটি সহ একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওটির বিবরণে উল্লেখ করা হয়, ভারতের বেঙ্গালুরুতে টিকটক হৃদয়সহ পাঁচজনকে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার করেছে বেঙ্গালুরু পুলিশ। তারা বাংলাদেশের এক তরুনীকে জোর করে পর্নোগ্রাফি তৈরি ও ধর্ষনের চেষ্টা করে, তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এদের মধ্যে একজন নারীও আছেন। সম্প্রতি টিকটক হৃদয়ের পরিচয় নিশ্চিত করেন বাংলাদেশের পুলিশ, অন্যরাও বাংলাদেশি। শুক্রবার সকালে টিকটক হৃদয়সহ দুইজন পালাতে গিয়ে, গুলিবিদ্ধ হয়ে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি হয়। প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ আলোচ্য ভিডিওটি ২০২১ সালে ভারতে বাংলাদেশি এক তরুণীকে কয়েকজন পাচারকারী বাংলাদেশিদের নির্যাতনের সময়ে ধারণ করা।
উল্লেখ্য দৈনিক যুগান্তরের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, নির্যাতনের ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর নারী পাচারের ঘটনায় পাঁচটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম তিনটি মামলায় বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর ভারতে গ্রেফতার হয়েছেন ১২ জন। এদের মধ্যে একজন ছাড়া সবাই বাংলাদেশি। এ ১২ জনের মধ্যে ১০ জনই ভারতের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বাংলাদেশে গ্রেফতার ব্যক্তিদের আটজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।
সুতরাং সামাজিক মাধ্যমে ২০২১ সালে ভারতে এক বাংলাদেশি তরুণীকে পাচারকারীদের নির্যাতনের ভিডিও সাম্প্রতিক বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার সাথে মিলিয়ে প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।