সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে বলা হচ্ছে, গত ১৪ মে পৃথিবীর খুব কাছ দিয়ে চলে গেছে বিশাল একটি গ্রহাণু। বিষয়টি নাসাও জানতো না। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে ও এখানে।
গত ১৮ মে অনলাইন সংবাদমাধ্যম 'Daily Bangladesh' এর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে একটি ফটোকার্ড পোস্ট করা হয়। পোস্টে উল্লেখ করা হয়, "পৃথিবীর খুব কাছ দিয়ে চলে গেল বিশাল গ্রহাণু, টের পেলো না নাসাও"। ফটোকার্ডটিতেও একই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ডেইলি বাংলাদেশ এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, "মঙ্গলবার (১৪ মে) বিশাল আকারের এক গ্রহাণু মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (নাসা) অগোচরেই পৃথিবীর খুব কাছ দিয়ে চলে গেছে।"
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। নাসার ওয়েবসাইটে আগে থেকেই এই গ্রহাণুটির পৃথিবীর কাছ দিয়ে যাওয়ার বিষয়ে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ গ্রহাণুটির পৃথিবীর কাছ দিয়ে যাওয়ার তথ্য আগে থেকেই নাসার কাছে ছিল। এছাড়া নাসা তাদের ওয়েবসাইটে পৃথিবীর কাছ দিয়ে অতিক্রম করার সময়ে গ্রহাণুর গতিপথ সরাসরি সম্প্রচার করে এবং আলোচ্য গ্রহাণুটির ক্ষেত্রেও সম্প্রচার করা হয়েছে।
ডেইলি বাংলাদেশ এর প্রতিবেদনে গ্রহাণুটির নাম উল্লেখ না করা হলেও তাদের প্রতিবেদনের সূত্র (সূত্রের বিষয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা আছে) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম 'টাইমস অব ইন্ডিয়া' নিজেদের প্রতিবেদনে বলেছে, গ্রহাণুটির নাম '2015 KJ19' এবং এটির আকার ৩৬৮ ফুট (১১২ মিটার)। এছাড়াও ডেইলি বাংলাদেশ তাদের প্রতিবেদনে- 'গ্রহানুটি নাসার অগোচরেই পৃথিবীর খুব কাছ দিয়ে চলে গেছে' উল্লেখ করা হলেও তাদের সূত্র 'টাইমস অব ইন্ডিয়া' এর প্রতিবেদনে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি নিয়ে ইংরেজিতে কি-ওয়ার্ড সার্চ এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা 'নাসা' এর ওয়েবসাইটে "Next Five Asteroid Approaches" শিরোনামে পরবর্তী সময়ে পৃথিবীর কাছ দিয়ে অতিক্রম করবে এমন পাঁচটি গ্রহাণুর তথ্যের লাইভ ডেটাবেজ পাওয়া যায়। যেহেতু আলোচ্য ঘটনাটি গত ১৪ মে এর সেহেতু বিষয়টি নিশ্চিতের জন্য সার্চ করে এই ডেটাবেজের মে মাসের ১২ ও ১৪ তারিখের আর্কাইভ খুঁজে বের করা হয়। আর্কাইভে থেকে দেখা যায়, নাসার ওয়েবসাইটে '2015 KJ19' গ্রহাণুটির নাম, আনুমানিক আকার, আকৃতির ধরণ ও ক্লোজেস্ট আর্থ এপ্রোচ এর তথ্য আগে থেকেই দেওয়া ছিল। ওয়েবসাইটটিতে গ্রহাণুদের অতিক্রমের একটি লাইভ ম্যাপও পাওয়া যায়। নাসার ওয়েবসাইটের স্ক্রিনশট দেখুন--
নাসার ওয়েবসাইটে গ্রহাণুটির আনুমানিক বা সম্ভাব্য আকার ৩৫০ ফুট উল্লেখ করা হলেও টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী এটির আকার ছিল ৩৬৮ ফুট। যা নাসার সম্ভাব্য আকারের কাছাকাছি।
নাসার ওয়েবসাইটে '2015 KJ19' গ্রহাণুটি পূর্বে কবে কখন পৃথিবীর কাছ দিয়ে অতিক্রম করেছে এবং পরবর্তীতে কবে কখন অতিক্রম করবে তার সম্ভাব্য তথ্যও উল্লেখ করা আছে। এর আগে সর্বশেষ গ্রহানুটি পৃথিবীর কাছাকাছি এসেছিল ২০২১ সালে।
অর্থাৎ '2015 KJ19' গ্রহাণুটি পৃথিবীর কাছ দিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আগে থেকেই তথ্য ছিল নাসা'র কাছে।
সুতরাং সম্প্রতি পৃথিবীর কাছ দিয়ে অতিক্রম করা গ্রহাণুর তথ্য ছিল না নাসার কাছে মর্মে যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে, তা সঠিক নয়।