সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে সংবাদের আদলে একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হচ্ছে, তথ্যমন্ত্রীকে বিএনপি লাঠিপেটা করেছে এবং হামলায় ৭ জন সেনা সদস্য নিহত হয়েছে। এরকম একটি পোস্ট দেখুন এখানে।
গত ১৮ জানুয়ারি 'আন্তর্জাতিক খবর' নামে একটি ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হয়, "আওয়ামীলীগের তথ্যমন্ত্রীকে বিএনপি লাঠিপেটা?হামলায় কমান্ডার সহ ৭ সেনা নিহত"। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থ্যাৎ ওই পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, তথ্যমন্ত্রীকে লাঠিপেটা করেছে বিএনপি সমর্থকরা এবং বিএনপির হামলায় ৭ সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, পোস্টে করা দাবিটি সঠিক নয়। ভিডিওটির ক্যাপশনে তথ্যমন্ত্রীকে বিএনপির লাঠিপেটা ও বিএনপির হামলায় ৭ সেনা সদস্যের মৃত্যুর কথা লেখা হলেও ভিডিওটির ভিতরে কোথাও এ ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই।
পোস্টটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সংযুক্ত ভিডিওটি টেলিভিশন সংবাদের আদলে তৈরি করা। ভিডিওটির ২০-২৪ সেকেন্ডে শিরোনাম হিসেবে বলা হয়, ট্রাকের সাথে মাইক্রোবাসের সংঘর্ষ, নিহত ৫। পরে, ৫ মিনিট ৪৫ সেকেন্ড থেকে ৭ মিনিট ১৭ সেকেন্ডে বলা হয়, "সোমবার (১৬ জানুয়ারি) মিয়নমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতি নিউজ জানায়, সাগাইং, ম্যাগওয়ে, বাগো অঞ্চলে, শান, কায়াহ এবং চিন রাজ্যে বিদ্রোহীদের হামলায় এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। তবে সেনা সদস্যের হতাহতের সংখ্যা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি সংবাদমাধ্যমটি। ইরাবতি নিউজ জানায়, শুক্রবার উত্তর শান রাজ্যের সেনি টাউনশিপে মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মির (এমএনডিএএ) সঙ্গে ভয়াবহ সংঘর্ষে জান্তা বাহিনীর ৩০ সদস্য নিহত হয়েছে। সংঘর্ষের সময় প্রচুর অস্ত্র, গুলিসহ সামরিক সরঞ্জাম রেখে পালিয়ে যায় সেনারা। ফেলে যাওয়া সামরিক সরঞ্জামের পুরোটাই জব্দ করেছে এমএনডিএএ। এ ছাড়া সাগাইং-এ সামরিক চেকপোস্টে বোমা হামলায় শাসক বাহিনীর ১০ সদস্য নিহত হয়। শনিবার সাগাইং অঞ্চলের আয়াদাউ শহরে ড্রোন দিয়ে বোমা হামলায় জান্তা বাহিনীর ২ সদস্য নিহত হয়। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন আহত হয়। রোববার কায়াহ রাজ্যের রাজধানী লোইকাউতে সামরিক বাহিনীর কায়াহ আঞ্চলিক কমান্ডের সদর দফতরে ড্রোন দিয়ে বোমা হামলা চালায় বিদ্রোহী গোষ্ঠী। হামলায় কয়েকজন সেনা হতাহত হয়েছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। এর বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হলে সহিংস দমননীতি গ্রহণ করে জান্তা সরকার। এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন কয়েক হাজারের বেশি বিক্ষোভকারী। এই সহিংসতার জেরে কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী সম্মিলিত হয়ে গঠন করে পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ)। এরপর থেকেই জান্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে তারা।" এছাড়াও, পুরো ভিডিওটির মধ্যে বিএনপির সাথে সংঘর্ষ ঘটার কথা বা সংঘর্ষে ৭ সেনা সদস্যের মৃত্যুর কোনো খবর বা তথ্য উপস্থাপন করা হয়নি।
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে সময় টিভির ওয়েবসাইটে গিয়ে গত ১৭ জানুয়ারি 'মিয়ানমারে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হামলায় ৬০ সেনা সদস্য নিহত' শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে আলোচ্য ভিডিও থেকে প্রাপ্ত সংবাদ বক্তব্যের মত হুবহু বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও নানাভাবে সার্চ করেও গণমাধ্যমে সম্প্রতি তথ্যমন্ত্রীকে বিএনপি সমর্থকদের লাঠিপেটা ও হামলায় ৭ সেনা সদস্য নিহতের কোন তথ্য বা খবর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং ভিডিওতে ভিন্ন খবর দিয়ে শিরোনামে তথ্যমন্ত্রীকে বিএনপির লাঠিপেটা ও হামলায় ৭ সেনার মৃত্যুর চটকদার ও ভিত্তিহীন তথ্য লিখে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।