সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক পেজ ও আইডি থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরের লিংক শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি বাড়ির ধ্বংসস্তূপ থেকে ৩৭ দিন পর এক নবজাতককে উদ্ধার করা হয়। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ২৮ নভেম্বর মূলধারার সম্প্রচার মাধ্যম 'independent24.tv' এর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে একটি ফটোকার্ড পোস্ট করা হয়। ওই পোস্টের নিচে "গাজায় ধ্বংসস্তূপের নিচে ৩৭ দিন বেঁচে ছিল এই নবজাতক" শিরোনামে সম্প্রচারমাধ্যমটির অনলাইনের একটি প্রতিবেদনের লিংক পোস্ট করা হয়। নিচে স্ক্রিনশট দেখুন--
এ ছাড়াও বাংলাদেশের আরো বেশ কয়েকটি মূলধারার গণমাধ্যমে খবরটি প্রকাশিত হতে দেখা যায়। এসব প্রতিবেদনের আর্কাইভ লিংক দেখুন--
মানবকণ্ঠ: গাজায় ৩৭ দিন ধ্বংসস্তূপের নিচে বেঁচে ছিল নবজাতক শিশু
কালবেলা: ধ্বংসস্তূপে ৩৭ দিন বেঁচে ছিল এই নবজাতক
সময় টিভি: ধ্বংসস্তূপের নিচে ৩৭ দিন বেঁচে ছিল শিশুটি
নিউজজোন: গাজায় ৩৭ দিন ধ্বংসস্তূপের নিচে বেঁচে ছিল নবজাতক শিশু
প্রতিবেদনগুলোতে দাবি করা হয়, গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি বাড়ির ধ্বংসস্তূপ থেকে ৩৭ দিন পর এক নবজাতককে উদ্ধার করা হয়েছে। ২৮ নভেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজের বরাত দিয়ে আরও বলা হয়, শিশুটিকে উদ্ধারের আগে অনেকে মৃত মনে করলেও পরে দেখা যায়, শিশুটি জীবিত রয়েছে। তবে শিশুটির মা-বাবা বেঁচে আছেন কি না তা জানা যায়নি।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, সামাজিক মাধ্যম এবং বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রচারিত খবরটি ভিত্তিহীন। গাজায় ধ্বংসস্তুপের নিচ থেকে জীবিত উদ্ধার হওয়া এই নবজাতক ৩৭ দিন নয় বরং ৩ ঘন্টা আটকে ছিল।
খবরের উৎস:
বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজকে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে। কি ওয়ার্ড সার্চ করে Watch video: Newborn rescued from Gaza rubble 37 days after her home was bombed শিরোনামে গালফ নিউজের ওই প্রতিবেদনটি পাওয়া যায়। যাতে বলা হয়, "একটি ফিলিস্তিনি শিশু যুদ্ধ শুরু হওয়ার মাত্র কয়েকদিন আগে জন্মগ্রহণ করেছিল। শিশুটি তাদের পরিবারের বাড়িতে বোমা হামলার পরে সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে বেঁচে গিয়েছিল। লক্ষণীয়ভাবে, প্রাথমিক আক্রমণের ৩৭ দিন পরে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়েছিল। শিশুটির বাড়ির অবশিষ্টাংশের কাছে উদ্ধার অভিযান চালানো হয়।" স্ক্রিনশট দেখন---
প্রতিবেদনে Gaza Notifications নামের একটি এক্স একাউন্টের (সাবেক টুইটার) একটি পোস্ট উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও ওই পোস্টের কমেন্টে Nooh AL-shaghnobi এর ইনস্টাগ্র্রাম একাউন্টের একটি পোস্ট পিন করে রাখা হয়েছে। ওই পিন পোস্টে বলা হয়, "এক মাসেরও কম সময়ে জন্ম নেওয়া একটি শিশুর বাবা মা ইসরায়েলের হামলায় নিহত হয়। আমরা আশা নিয়ে ৩ ঘন্টা চেষ্টার পর জীবিত নবজাতককে উদ্ধার করি।"
প্রতিবেদনটির সূত্র হিসেবে সিভিল ডিফেন্সের একজন সদস্য এবং ফটোগ্রাফার Nooh AL-shaghnobi নাম উল্লেখ করা হয়েছে। কি ওয়ার্ড সার্চ করে Nooh AL-shaghnobi নামের ওই ব্যাক্তির ইনস্টাগ্রাম আইডিতে গিয়ে একটি ভিডিও পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। ২৭ নভেম্বর করা ওই পোস্টে দাবি করা হয়, "এক মাসেরও কম সময়ে জন্ম নেওয়া একটি শিশুর বাবা মা ইসরায়েলের হামলায় নিহত হয়। আমরা আশা নিয়ে ৩ ঘন্টা চেষ্টার পর জীবিত নবজাতককে উদ্ধার করি। নিচে পোস্টটি দেখুন--
এদিকে, ভিডিওটির কি ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক গণমাধ্যম middleeastmonitor এর ইনস্টাগ্রামে একই ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। Baby girl miraculously recovered from her family’s demolished house শিরোনামে ২৮ নভেম্বর পোস্ট করা ভিডিওতে বলা হয়, "গাজায় একটি নবজাতক শিশুকে তার পরিবারের বাড়ির ধ্বংসস্তূপ থেকে অক্ষত অবস্থায় বের করা হয়েছে। ভিডিওটিতে দেখানো হয়েছে যে এই মাসের শুরুতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় তার বাড়ি লক্ষ্যবস্তু হওয়ার পর সিভিল ডিফেন্সের ক্রুরা তাকে সফলভাবে টেনে নিচ্ছে। ধ্বংসস্তূপে একা পাওয়া মেয়েটি অন্য শিশুদের খুঁজে পাওয়ার আশা জাগিয়েছে, যখন জাতিসংঘ বলেছে যে গাজা দুঃখজনকভাবে শিশুদের কবরস্থানে পরিণত হচ্ছে।" নিচে পোস্টটি দেখুন--
অর্থাৎ গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি বাড়ির ধ্বংসস্তুপ থেকে এক নবজাতককে ৩ ঘণ্টা পর উদ্ধার করা হয়েছে।
সুতরাং গাজায় এক ধ্বংসস্তুপ থেকে এক নবজাতককে ৩ ঘন্টা পর জীবিত উদ্ধারের ঘটনাকে ৩৭ দিন পর তাকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।