সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি পেজ ও গ্রুপে পোস্ট করে বলা হচ্ছে, জাতিসংঘের জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কো বাংলাদেশ সরকারকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য ৭২ ঘন্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে বাংলাদেশকে জাতিসংঘ থেকে বহিষ্কার করা হবে বলেও জানানো হয় ওই পোস্টগুলোতে। এরকম কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ১৯ জুলাই 'Bangladesh Community Group USA' নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে 'Naim Ul Bhuiyan' নামে একটি একাউন্ট থেকে পোস্ট করে বলা হয়, "📌"সতর্ক" সরকারকে ৭২ ঘণ্টা সময় দিয়েছে জাতিসংঘের সংস্থা ইউনেস্কো। যদি দেশ আর দেশের পরিস্থিতিকে ঠিক করা না হয়,সরকারকে বহিষ্কার করা হবে!!! সরকার মূলতঃ আলোচনায় বসতে চাচ্ছে নিজের গদি বাঁচানোর জন্য। নয়তো বুলেটের ভাষায় কথা চলতো, যেভাবে এতদিন চালাচ্ছিলেন। ভুলেও আলোচনায় বসা যাবে না, ভুলেও আন্দোলন থামানো যাবে না। I repeat, ভুলেও আলোচনায় বসা যাবে না, ভুলেও আন্দোলন থামানো যাবে না। কোন আপস আর হবে না আমরা মানবোনা।আমার ভাইয়েরা যখন রক্ত দিছে আমরা ১বিন্দু ও পিছু হটবো না।হয় এই সরকার থাকবে না হয় আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা থাকবো। আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দিবো না✊✊ #SaveBangladeshiStudents #StepDownHasina"। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, আলোচ্য দাবিটি সঠিক নয়। সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশে তৈরি হওয়া অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে কোনো বক্তব্য দেয়নি ইউনেস্কো।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ইউনেস্কো কোনো হুশিয়ারিমূলক বক্তব্য দিয়েছে কি না জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বাংলাদেশকে জাতিসংঘ থেকে বহিষ্কারের হুঁশিয়ারি সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে আরো কি-ওয়ার্ড সার্চ করে United Nations Human Rights-এর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গত ১৯ জুলাই পোস্ট করা একটি ফেসবুক পোস্টে জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধানের বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়। ফেসবুক পোস্টটিতে বলা হয়, বাংলাদেশ চলমান ভয়ানক সহিংসতার ব্যাপারে দায়িত্বশীলদের কাছে জানতে চেয়েছেন। এছাড়াও সব পক্ষকে সংযত থাকতে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের ভিতরে অবস্থান করতে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ফেসবুক পোস্টটি দেখুন--
আরো সার্চ করে জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার ওয়েবসাইটে গত ১৯ জুলাই "UN Human Rights Chief Volker Türk calls for accountability and dialogue in Bangladesh" শিরোনামে প্রকাশিত একটি বিবৃতি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত বিবৃতিতে মানবাধিকার প্রধানকে বলতে দেখা যায়, "শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারের ও তাদের সমাবেশ ও স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকার বজায় রাখতে যেন বাংলাদেশ সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়।" মূলত তিনি বাংলাদেশে সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান, দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে তরুণদের সাথে আলোচনা এবং সাম্প্রতিক ঘটনার পরে বাংলাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তবে, আলোচ্য দাবিটির মত কোনো বক্তব্য সেখানে খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও, গত ২২ জুলাই জাতিসংঘের মহাসচিবের পক্ষ থেকে তাঁর মুখপাত্র এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, বাংলাদেশে চলমান সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছেন মহাসচিব। তিনি আশা করছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় এবং আন্দোলনকারীদের নেওয়া সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আলোচনার পরিবেশ তৈরি হবে। তবে, সেখানেও বাংলাদেশকে জাতিসংঘ থেকে বহিষ্কারের ব্যাপারে কোনো বক্তব্য উঠে আসেনি।
অর্থাৎ, জাতিসংঘ বা জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থেকে ৭২ ঘন্টার মধ্যে উত্তরণ ঘটাতে না পারলে বাংলাদেশ সরকারকে বহিষ্কারের হুশিয়ারি দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয়।
সুতরাং ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে সাম্প্রতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থেকে ৭২ ঘন্টার মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যেতে না পারলে বাংলাদেশকে বহিষ্কার করার হুঁশিয়ারি দেওয়ার ভুয়া তথ্য প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুক, যা বিভ্রান্তিকর।