সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে পোস্ট করে বলা হচ্ছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে ক্রিকেট খেলাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছেন। এরকম কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ১১ আগস্ট 'Sofed Shouwkhin' নামে একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে একটি ছবি পোস্ট করা হয়। ছবিটিতে লেখা থাকতে দেখা যায়, "" ক্রিকেট বাংলাদেশের তরুনদের মূল্যবান সময় নষ্ট ও মানুষিক ভারসাম্য রক্ষায় বাধা, এইজন্য আমি খুব দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে বিসিবি ও ক্রিকেটকে এদেশ থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করবো " -Dr.Yunus on Bangladesh Cricket's future"। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য দাবিটি সঠিক নয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে ক্রিকেটকে নিষিদ্ধ করা হবে- এরকম কোনো বক্তব্য দেননি। বরং নবগঠিত সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে নিজের মত করে কাজ করতে হবে বলে জানিয়েছেন। তবে ক্রিকেট নিষিদ্ধের কোনো দাবি বা তথ্য কোথাও উঠে আসেনি।
প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশ ক্রিকেট নিষিদ্ধের ব্যাপারে কিছু বলেছেন কি না জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দৈনিক পত্রিকা ডেইলি স্টার বাংলার অনলাইন ভার্সনে গত ১২ আগস্ট "বিসিবির সিদ্ধান্ত আমরা নিতে পারব না: আসিফ মাহমুদ" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেছেন, তারা বিসিবিকে পরামর্শ দিতে পারেন। তবে, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হওয়ায় বিসিবির কার্যক্রমের উপরে কোনো সিদ্ধান্ত তারা নেবেন না। স্ক্রিনশট দেখুন--
আরো সার্চ করে দৈনিক পত্রিকা মানবজমিনের ওয়েবসাইটে বিসিবি’র বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত আসিফ মাহমুদের শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন থেকেও জানা যায় একই তথ্য।
পরবর্তীতে আরো কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলোর অনলাইন ভার্সনে গত ১০ আগস্ট "বাংলাদেশে নারী বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে আশাবাদী ক্রীড়া উপদেষ্টা" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ভরসা করে বলতে দেখা যায়, "‘আমাদের সৌভাগ্য, ইউনূস স্যার আছেন সঙ্গে। আমাদের যেসব বিনির্মাণ করা প্রয়োজন, সচিবের কাছে কিছু কিছু শুনেছি। সেসব সংস্কারের জন্য আমরা রোববারই বসব। আমি সচিবের সঙ্গে বসব। মন্ত্রণালয়ে বসে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্যার আমাদের নেতৃত্বে আছেন, যিনি নিজেও ক্রীড়াপ্রেমী। তিনি কয় দিন আগে অলিম্পিকের সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলে আশা করি নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আমাদের দেশেই ঠিকঠাক আয়োজন করতে পারব। এটা আয়োজনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’" অর্থাৎ ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস নিজেই একজন ক্রীড়াপ্রেমী ব্যক্তি। তাই, তার পক্ষে ক্রিকেট খেলাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে চাওয়ার তথ্যটিও সঠিক হওয়া স্বাভাবিক নয়। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও গণমাধ্যমে বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড ধরে সার্চ করে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বাংলাদেশ ক্রিকেট নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে দেওয়া কোনো বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে ক্রিকেট খেলাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার তথ্যটি সঠিক নয়।
সুতরাং বাংলাদেশে ক্রিকেটকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন বলে যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, তা সঠিক নয়।