সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন পেজ এবং গ্রুপে পোস্ট করে বলা হচ্ছে, কয়েকশ কোটি টাকা ব্যায়ের পর ডিজিটাল ভূমি জরিপ প্রকল্পটি বাতিল করা হয়েছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৩ ডিসেম্বর 'Marnus Ahmed' নামের ফেসবুক একাউন্ট থেকে "৩৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ের পর বাতিল হলো, ডিজিটাল ভূমি জরিপ প্রকল্প। ইশশশ, এই টাকা গুলো কি কারো বাবার ছিলো ?” ক্যাপশনে একটি পোস্ট করা হয়। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। আলোচ্য ডিজিটাল ভূমি জরিপ প্রকল্পটি বাতিল হয়নি বলে নিজেদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে 'ভূমি মন্ত্রণালয়'।
কি-ওয়ার্ড সার্চ এর মাধ্যমে দেশীয় সংবাদমাধ্যম 'মানব কণ্ঠ' এর অনলাইন সংস্করণে গত ২৫ ডিসেম্বর "ডিজিটাল ভূমি জরিপ বাতিলের খবর গুজব: ভূমি মন্ত্রণালয়" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, "এক বিজ্ঞপ্তিতে ভূমি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে- '৩৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ের পর বাতিল হচ্ছে ডিজিটাল ভূমি জরিপ প্রকল্প’ এমন শিরোনামে একটি তথ্য অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে যা সম্পূর্ণ গুজব”। প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট দেখুন--
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সার্চ করে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ-এ গত ২৫ ডিসেম্বর প্রকাশিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টে উল্লেখ করা হয়, "ভূমি জরিপ বাতিল হওয়ার খবরটি সত্য নয়"। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ ডিজিটাল ভূমি জরিপ প্রকল্পটি বাতিল করা হয়নি।
বিভ্রান্তির সূত্রপাত যেভাবে
ভূমি মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত শিরোনাম অনুযায়ী সার্চ করে দেখা গেছে দেশীয় সংবাদমাধ্যম 'দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড' এর অনলাইনের বাংলা সংস্করণে গত ২২ ডিসেম্বর "৩৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ের পর বাতিল হচ্ছে ডিজিটাল ভূমি জরিপ প্রকল্প" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। একইসাথে গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজে এ সংক্রান্ত একটি ফটোকার্ড-ও প্রচার করা হয়। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড তাদের শিরোনামে 'প্রকল্পটি বাতিল হচ্ছে' বলে সম্ভাব্যতার বিষয়ে উল্লেখ করলেও সেই প্রতিবেদনটির লিংক এবং ডিজিটাল ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে 'প্রকল্পটি বাতিল হয়ে গেছে' বলে গৃহীত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। ডিজিটাল ফটোকার্ড যুক্ত করে প্রচারিত একটি ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট দেখুন--
তবে পরবর্তীতে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড তাদের অনলাইন সাইট থেকে আলোচ্য বিষয়ের বাংলা প্রতিবেদন, ইংরেজি প্রতিবেদন (উপসংহারমূলক প্রতিবেদন) ও ফটোকার্ড যুক্ত ফেসবুক পোস্টটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এছাড়াও, গণমাধ্যমটি পরবর্তী এক প্রতিবেদনে ভূমি মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আলোচ্য রিপোর্টির মুদ্রণত্রুটি স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেছে।
উল্লেখ্য গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত এক খবর অনুযায়ী সেসময়ে পুরোনো পদ্ধতির ভূমি জরিপ প্রকল্প বন্ধ করে কেবল ডিজিটাল ভূমি জরিপ প্রকল্প পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছিল ভূমি মন্ত্রণালয়। এনালগ পদ্ধতির জরিপ প্রকল্প বন্ধের পুরোনো এই নির্দেশনার খবর সাম্প্রতিক ঘটনাক্রমের সাথে বিভ্রান্তিকরভাবে ফেসবুকে প্রচার হতে দেখা গেছে।
সুতরাং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডিজিটাল ভূমি জরিপ প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে বলে যে দাবি প্রচার করা হচ্ছে; তা বিভ্রান্তিকর।