সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি, পেজ ও গ্রুপে একজন সন্তানসম্ভবা পুলিশ সদস্যের একটি ছবি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, জুলাই আন্দোলনকারীরা এই নারী পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৩ এপ্রিল 'হৃদয়ে বাংলাদেশ' নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ছবিটি পোস্ট করে উল্লেখ্য করা হয়, “আবু সাইদকে কোটি কোটি টাকা খরচ করে ড্রোন দিয়ে আকাশে উড়ালেন,তার মূর্তি বানিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা পালন করলেন।তার পরিবারকে জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে কোটি কোটি টাকা দিলেন।জনে জনে মিডিয়া দেখানোর জন্য তার কবরে জিয়ারত করলেন।তার লুঙ্গি পরা ভাইদের প্যান্ট পরালেন। অথচ এই পুলিশ কনস্টেবল মহিলাটি নির্দোষে মারা গেলেন,তার বাচ্চাটিকেও আপনারা পৃথিবীতে আসতে দেননি।কোন সাংবাদিক বা মিডিয়া তাকে নিয়ে কিছু প্রচার করেন নি,তার দোষ কি জানেন,সে একজন পুলিশ। অন্ততপক্ষে পেটের বাচ্চাটির কথা মনে করে হলেও এই মহিলাকে বাঁচার সুযোগ দেওয়ার প্রয়োজন ছিল।” নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ছবিটি বাস্তব নয়। অর্থাৎ ছবিটি বাস্তব কোনো সন্তানসম্ভবা পুলিশ সদস্যের নয় বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।
আলোচ্য ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে গ্রহণযোগ্য কোনো মাধ্যমে দাবি অনুযায়ী ছবিগুলো বাস্তব হওয়ার বিষয়ে কিংবা ছবির বিষয়েও উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে, কি-ওয়ার্ড সার্চ করে “এনায়েতপুরে পিটিয়ে মারা ১৩ পুলিশের কেউ নারী নন, গর্ভবতী বলে ভাইরাল নারী জীবিত” শিরোনামে ‘আজকের পত্রিকার’ অনলাইনে একটি ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে বলা হয়, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় নিহত ১৩ জন পুলিশ সদস্যের মধ্যে গর্ভবতী নারী পুলিশ থাকার তথ্যটি সঠিক নয়।
আলোচ্য ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, এটি বাস্তব ছবির বৈশিষ্ট্যের সাথে সাংঘর্ষিক এবং এরমধ্যে এআই ব্যবহার করে তৈরি করা ছবির বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়।
পরবর্তীতে, এআই ছবি শনাক্তের টুল 'হাইভ' ব্যবহার করে ছবিগুলো যাচাই করা হয়। টুলটি ছবিটিকে সম্ভাব্য এআই দ্বারা তৈরি ছবি হিসেবে ফলাফল প্রদান করেছে। ছবিটির ফলাফলের স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়া এআই ছবি শনাক্তের আরেক টুল 'ইজ ইট এআই' ব্যবহার করেও ছবিটি যাচাই করা হয়। এই টুলটিও ছবিটিকে সম্ভাব্য এআই দ্বারা তৈরি ছবি হিসেবে ফলাফল প্রদান করেছে। ছবিটির ফলাফলের স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ আলোচ্য ছবিটি বাস্তব নয় বরং এটি এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।
সুতরাং এআই প্রযুক্তিতে তৈরি ছবিকে সন্তানসম্ভবা পুলিশ সদস্যের ছবি হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।