সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও একাধিক সংবাদমাধ্যমে এক কিশোরীর রক্তাক্ত মুখমণ্ডলের ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ইরানের বির্জন্ড জেলার একটা মফস্বল গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের ক্লাস ফোরে পড়া ছাত্রীর ছবি এটি। দাবি করা হচ্ছে, হিজাব না পরায় ইরানি হিজাব রক্ষক বাহিনীর হাতে আহত হয়েছেন তিনি। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ৪ মার্চ "Mamunur Rashid' নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে ছবিটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "আহা ইসলাম কি সুন্দরঃ মেয়েটার নাম "সারাহ মাখতুম" ইরানের বির্জন্ড জেলার একটা মফস্বল গ্রামে বাস। ওখানের একটা প্রাইমারি স্কুলের ক্লাস ফোরে পড়া ছাত্রী। হিজাব না পরেই স্কুলে চলে গেছিল ছোট মেয়েটি। সে জানতো না অ্যাতুল্ল্যার হিজাব রক্ষক বাহিনী এসে স্কুলে হামলা দিয়ে মেয়েটাকে টেনে হিচড়ে বের করে স্কুলের সকল ছাত্র ছাত্রী শিক্ষক কে মাঠে একত্র করে মেয়েটার নাক কেটে দিবে। এবং 30 দররা চাবুক মারার বিচারও হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষক রা হাতে পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে মেয়েটা কে দর্রা মারা থেকে কোন মতে বাঁচিয়েছে।...” স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ক্যাপশনে করা দাবিটি সঠিক নয়। হিজাব না পরায় তার উপর কেউ হামলা করেনি বরং সহপাঠীর সাথে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে আহত হন ইরানি এই কিশোরী।
ছবিটি রিভার্স সার্চ করার পর, 'Saheb Khabar' নামের ফার্সি ভাষায় প্রকাশিত ইরানের সংবাদমাধ্যমে 'ماجرای دختر دانشآموز اصفهانی با صورت خونآلود چه بود؟ (What was the story of the Isfahani student girl with a bloody face?)' শিরোনামে একটি খবরে খুঁজে পাওয়া যায়, যা ২০২২ সালের ৩ মার্চ প্রকাশিত হয়েছে। স্বয়ংক্রিয় অনুবাদের মাধ্যমে প্রতিবেদনটির থেকে জানা যায়, ইরানের ইস্পাহান শহরের খানেহ নামক এলাকায় দুই শিক্ষার্থী ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে একে অপরের সাথে হাতাহাতির এক পর্যায়ে এক শিক্ষার্থীর মা এসে অপর শিশুর মুখে আঘাত করেন। এতে ঐ শিক্ষার্থী আহত হয়। এই ঘটনায় আঘাতকারী নারীর বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করেছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট দেখুন--
এই সূত্রধরে সার্চ করার পর, ইরানের মেহের নিউজ এজেন্সিতে ২০২২ সালের ৩ মার্চ "ماجرای خونآلود بودن صورت دانشآموز اصفهانی چه بود؟" শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে মুখমণ্ডল রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পাওয়া ঐ কিশোরী আহত হওয়ার সাথে হিজাব পরা না পরার কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনটিতে ইস্পাহান প্রদেশের শিক্ষা জনসংযোগ বিভাগের তৎকালীন প্রধান জালাল সালমানির বরাতে উল্লেখ করা হয়, স্কুল শেষে বাড়ি ফেরার সময় দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে তর্কাতর্কি ও হাতাহাতির ঘটনাটি ঘটে। পরে স্কুলের প্রিন্সিপাল বিষয়টি তদন্ত করেন এবং অভিভাবকদের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হন দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে বিরোধ ও উত্তেজনার কারণে এটি হয়েছে। এখানে সরকারি শাস্তিদানের কোনো ঘটনা নেই।
একই তথ্য সহ খবরটি আরও একাধিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। প্রসঙ্গত ইরানে দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা বিক্ষোভের মুখে গত ডিসেম্বর মাসে ‘নীতি পুলিশ’ বিলুপ্ত করে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
অর্থাৎ ছবির কিশোরী হিজাব না পরায় ইরানের হিজাব রক্ষক বাহিনী দ্বারা আক্রান্ত হয়নি।
সুতরাং দুই শিক্ষার্থীর বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে অপর শিক্ষার্থীর অবিভাবকের দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত এক ইরানি কিশোরীর রক্তাক্ত ছবি প্রচার করে ইরানের হিজাব রক্ষক বাহিনী হাতে আক্রান্ত দাবি করা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে, যা সঠিক নয়।