সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপ থেকে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের একটি সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, সম্প্রতি বাংলাদেশের ২৮০ এমপি-মন্ত্রীদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পিটার হাসের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পুনরায় নির্বাচন হওয়ার আলোচনা হয়। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি ‘'aB.N.P-Lover-News' নামের একটি পেজ থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়, "হঠাৎ ভিসা নিষেধাজ্ঞার ২৮০ এমপি মন্ত্রীর ওপরে নিষেধাজ্ঞা দিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। নির্বাচন কমিশন সঙ্গে আলোচনার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার অধীনে নির্বাচন হওয়ার আলোচনা হয় ইনশা-আল্লাহ।" নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি ভিত্তিহীন। বাংলাদেশের ২৮০ এমপি-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়ার খবরটি নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়া, বেসরকারি টিভি চ্যানেল এনটিভি'তে প্রকাশিত পিটার হাসের একটি পুরোনো সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও পোস্ট করে আলোচ্য দাবিতে ভিডিওটি বানানো হয়েছে।
আলোচ্য ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে এরমধ্যে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভির লোগো দেখতে পাওয়া যায়, এর ভিত্তিতে চ্যানেলটির ইউটিউব চ্যানেল 'NTV News'-এ ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর প্রকাশিত "হঠাৎ নির্বাচন কমিশনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ক্ষেত্রে সংলাপ, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার উপরে গুরুত্বারোপ করেছেন। পাশাপাশি নির্বাচনের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা চেয়েছেন। প্রতিবেদনটি দেখুন--
এনটিভির এই ভিডিওটির সাথে আলোচ্য ফেসবুক প্রচারিত ভিডিওটির হুবহু মিল পাওয়া যায়। এনটিভির ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত ভিডিওটি থেকে নেয়া স্ক্রিনশট (বামে) এবং আলোচ্য ভিডিওটি থেকে নেয়া স্ক্রিনশটের (ডানে) পাশাপাশি তুলনা দেখুন--
ছবি দুটির মধ্যে বাম পাশে উপরে কর্নারে এনটিভির লোগো, ডান পাশে উপরে কর্নারে বিকাশের বিজ্ঞাপন, ভিডিওর মাঝখানে ওপরে দেয়াল ঘড়ি, নিচে এক ব্যক্তির মোবাইলে ভিডিও ধারণ করার দৃশ্য হুবহু মিল পাওয়া যায়।
এদিকে, গেল বছরে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ডে জড়িতদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ বন্ধ করতে ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। পরবর্তীতে এই ভিসানীতি প্রয়োগ শুরু করার ঘোষণা দেয়া হয়।
প্রসঙ্গত, নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তদের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা রেকর্ড আইন অনুযায়ী ভিসা নিষেধাজ্ঞা পাওয়া ব্যক্তিদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়না। "ভিসা নীতির প্রয়োগ নিয়ে ডেইলি স্টারকে যা বললেন ডোনাল্ড লু" শিরোনামে গত ২২ সেপ্টেম্বর দ্যা ডেইলি স্টারের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু দ্য উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, "আমরা শুরু থেকেই বলেছি, এই নীতির আওতায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা যাদের দেওয়া হবে, তাদের নাম আমরা প্রকাশ করব না। কাউকে ভিসা না দেওয়াসহ যেকোনো ভিসা রেকর্ড মার্কিন আইন অনুযায়ী গোপনীয় তথ্য।"
অর্থাৎ যুুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা হয় না, তাই কাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে তা জানারও কোনো উপায় নেই।
এছাড়া, বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দেশি-বিদেশী কোনো গণমাধ্যমে বাংলাদেশের ২৮০জন এমপি-মন্ত্রীর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কোনো খবর খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের ২৮০ এমপি-মন্ত্রীদের উপর কোনো নিষেধাজ্ঞা এলে তা মূলধারার গণমাধ্যমে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হত।
সুতরাং ২৮০ এমপি-মন্ত্রীকে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বলে ভিত্তিহীন দাবি প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।