সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক পেজ ও আইডি থেকে একটি ফটোকার্ড পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের ২৫০ সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এরকম একটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ১৬ মে 'হবিগঞ্জ সাইবার ফোর্স' নামের একটি পেজ থেকে একটি ফটোকার্ড পোস্ট করা হয় যেখানে লেখা রয়েছে, "অবৈধ শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের ২৫০ সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিল যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি লংঘন এর সাথে জরিত এই সমস্ত আওয়ামী লীগ সরকার দালালদের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিল ইউএসএ।" নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি বিভ্রান্তিকর। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার নয় বরং নিকারাগুয়ার সরকারের ২৫০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
শুরুতে বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দেশি-বিদেশী কোনো গণমাধ্যমে বাংলাদেশের ২৫০ সরকারি কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কোনো খবর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে কি-ওয়ার্ড সার্চে "২৫০ সরকারি কর্মকর্তার ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিল যুক্তরাষ্ট্র" শিরোনামে বাংলাদেশি এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে প্রতিবেদন প্রকাশ হতে দেখা যায়। এসব প্রতিবেদনগুলোতে উত্তর আমেরিকার দেশ নিকারাগুয়ার ২৫০ জনের বেশি সরকারি কর্মকর্তার ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এসব প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া নিকারাগুয়ার ২৫০ ব্যক্তির মধ্যে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নেই। এরকম দুটি স্ক্রিনশট দেখুন--
আরও দেখুন--
এছাড়াও কি-ওয়ার্ড সার্চ করে "Promoting Accountability for Nicaraguan Officials" শিরোনামে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা একটি বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়। বিজ্ঞপ্তিটি ১৫ মে প্রকাশ করা হয়। যেখানে বলা হয়, মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতার উপর আক্রমণ, সুশীল সমাজের সংগঠনগুলোর উপর দমন-নিপীড়ন এবং ঝুঁকিপূর্ণ অভিবাসীদের অর্থ বন্ধ করায় নিকারাগুয়া সরকারের ২৫০ জনের বেশি পুলিশ ও আধা-সামরিক কর্মী, পেনটেনশিয়ারি কর্মকর্তা, প্রসিকিউটর, বিচারক এবং সরকারি উচ্চ শিক্ষা বিষয়ক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ নিকারাগুয়া সরকারের ২৫০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়ার খবরকে বিভ্রান্তিকরভাবে বাংলাদেশ সরকারের সাথে মিলিয়ে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য গেল বছরে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ডে জড়িতদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ বন্ধ করতে ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। এবং পরে এই ভিসানীতি প্রয়োগ শুরু করার ঘোষণাও দেয়া হয়। এছাড়া, সম্প্রতি বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দায়িত্বে থাকাকালে দুর্নীতি সহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় বলে জানানো হয়েছে।
সুতরাং বাংলাদেশের ২৫০ সরকারি কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বলে ভিত্তিহীন দাবি প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।