সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি ও পেজ থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হচ্ছে, একজন হিন্দু শিক্ষিকাকে জুতার মালা পরিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এরকম কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ১ সেপ্টেম্বর 'Sanjoy Ks' নামের একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হয়, "হিন্দু শিক্ষিকাকে জুতার মালা পড়িয়ে আনন্দোচ্ছ্বাস করছে সোনার ছাত্রছাত্রীরা।"। ভিডিওটিতে অনেক মানুষের ভীড়ে এক নারীকে জুতার মালা পরিয়ে হাটিয়ে নিয়ে যেতে দেখা যায়। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। পোস্টে দেখানো নারী কোনো স্কুলের শিক্ষিকা নন। গত ১৭ আগস্ট গাজীপুরের মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় একজন নারীসহ মোট তিনজনের একটি নারী পাচারকারী দল আটক হয়। আলোচ্য ভিডিওটিতে ওই নারীকে দেখা যাচ্ছে।
আলোচ্য ভিডিওটি থেকে কি-ফ্রেম কেটে নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে গত ১৭ আগস্ট 'Manik Morol' নামের একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে একই ঘটনায় ভিন্ন দিক থেকে ধারণকৃত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ফেসবুক ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, "দেহ ব্যবসায়ী,পাচারকারী ও চাঁদাবাজ আটক মাওনা চৌরাস্তা শ্রীপুর, গাজীপুর।"। উক্ত ভিডিওটিতে আলোচ্য ভিডিওটিতে দেখানো নারীসহ তাঁর পাশে উপস্থিত ব্যক্তিদেরকেও দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও, ভিডিওটিতে উক্ত নারীসহ আরো দুই ব্যক্তিকে জনতার হাতে আটক অবস্থায় উপস্থিত থাকতে দেখা যায় যাদের সবার গলায় বিভিন্ন লেখাসম্বলিত প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে দেয় জনতা। এর মধ্যে, ওই নারীর গলায় "আমি নারী পাচারকারী, আমি দেহ ব্যবসায়ী" লেখাসম্বলিত প্ল্যাকার্ড ঝোলানো থাকতে দেখা যায়। ফেসবুক পোস্টটি (আর্কাইভ) দেখুন--
আরো সার্চ করে ওই একই দিনে 'Jahangir Alom' নামে একটি একাউন্ট থেকে "ছিনতাইকারী ও দেহ*/ব্যাবসা ই' চক্র! ছাত্র জনতার গণপিটুনি! মাওনা চৌরাস্তা, শ্রীপুর, গাজীপুর।" ক্যাপশনে করা একটি লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ওই ভিডিওটিতে আলোচ্য ভিডিওটিতে দেখানো নারীসহ মোট তিনজনকে ছিনতাইকারী হওয়ার অভিযোগে আটক করে মুখে চুনকালি মাখিয়ে দেওয়া এবং জুতার মালা পরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখতে দেখা যায়। এছাড়াও, লাইভকারী ব্যক্তির দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, গাজীপুরের মাওনায় আলোচ্য ঘটনাটি ঘটে। ফেসবুক ভিডিওটি দেখুন--
অর্থাৎ আলোচ্য ভিডিওটি কোনো হিন্দু স্কুলশিক্ষিকাকে জুতার মালা পরিয়ে হাঁটানোর নয়। গাজীপুরের মাওনায় নারী পাচারের অভিযোগে আটক ব্যক্তিদের একটি ভিডিওর খণ্ডিত অংশ বিভ্রান্তিকর দাবিসহ প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং ভিন্ন ঘটনার ভিডিও শেয়ার করে ভিডিওটি হিন্দু স্কুলশিক্ষিকাকে জুতার মালা পরানোর ঘটনার ভিডিও বলে দাবি করে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে যা বিভ্রান্তিকর।