সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক পেজ থেকে একটি পোস্ট করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বরাতে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের অবসরের দিনে রাষ্ট্রীয় ছুটি ঘোষণা করা হবে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ২৪ এপি 'Crush Page BD' নামের একটি পেজ থেকে একটি পোস্ট করে লেখা হয়, "সাকিবের অবসরের দিন রাষ্টীয় ছুটি ঘোষণা করা হবে : নাজমুল হাসান পাপন। সাকিবের সাথে তার অবসর নিয়ে আমার খোলামেলা আলোচনা হয়েছে ও চায় ধারাবাহিক ভাবে একটি একটি করে ফরম্যাট ছাড়তে। ও সবশেষ যেই ফরম্যাট থেকে বিদায় নিবে সেই ম্যাচে বিসিবির বিশেষ কিছু পরিকল্পনা আছে, ইতিমধ্যে আমার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা হয়েছে সাকিবের অবসরের দিনে রাষ্ট্রীয় ছুটি ঘোষণা করা হবে। এবং বিসিবি একটি বিশেষ মুকুট সাকিবকে পড়িয়ে দিবে যা একটা ঐতিহ্য বহন করবে অদুর ভবিষৎে যদি এমন কাউকে আমরা পাই তখন তাকে সেই মুকুটটি উপহার দেওয়া হবে। আরও অনেক কিছুই হবে সব তো এখনি বলা যাবেনা। 🗣️ নাজমুল হাসান পাপন" ফটোকার্ডটিতে লেখা রয়েছে, "সৌম্য ভাইয়ের জন্যই আমরা এই ম্যাচটি হেরেছি: নাজমুল হোসেন শান্ত।" নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য দাবিটি সঠিক নয়। তথ্যসূত্র ছাড়াই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বরাতে আলোচ্য তথ্যটি ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে সম্প্রতি সাকিব আল হাসানের অবসর নিয়ে কোনো মন্তব্যই করেননি পাপন।
সাধারণত সাকিব আল হাসানের অবসর নিয়ে বিসিবির এমন কোনো পরিকল্পনা থাকলে সেটি গণমাধ্যমে গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হত। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কি-ওয়ার্ড সার্চ করে আলোচ্য পোস্টে উল্লিখিত তথ্য সংক্রান্ত কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি গণমাধ্যমে। তবে খেলা চালিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে "সাকিব নামার পর থেকে মানুষ পাগল হয়ে গেছে: বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান" শিরোনামে ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখের প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে পাপনের মন্তব্য পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে পাপনের উদ্ধিৃতি দিয়ে বলা হয়, "সাকিব অবসরে যাবেন নাকি খেলা চালিয়ে যাবেন সে বিষয়ে তার সাথে কথা হয়েছে। তাঁর ২০২৫ সাল পর্যন্ত খেলার কথা।" স্ক্রিনশট দেখুন--
এদিকে, কি-ওয়ার্ড সার্চ করে "অবসর নিয়ে যা বললেন সাকিব" শিরোনামে গত ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা পোস্টের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, "গত ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকে চোখের সমস্যা নিয়ে বেশ ভুগছেন সাকিব আল হাসান। কয়েকটি দেশে ডাক্তার দেখিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। চোখের সমস্যার প্রভাব পড়ছে তার ব্যাটিংয়ে। চলতি বিপিএলে একদমই রান পাচ্ছেন না তিনি। পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলনে তার অবসর নিয়ে প্রশ্ন করা হয় সাকিবকে। জবাবে তিনি বলেন, এখনই অবসরের কোনো ভাবনাই নেই। সবাই চেষ্টা করছে সাহায্য করার। যাতে করে আমি যে সমস্যা ফেস করছি, উতরে যেতে পারি। আমার এখন পর্যন্ত কোনো ভাবনা নেই।" স্ক্রিনশট দেখুন--
এদিকে, বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড সার্চ করেও সাকিবের অবসরের ব্যাপারে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন আলোচ্য মন্তব্য করেছেন এমন কোনো খবর গণমাধ্যমে পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি বিসিবির ওয়েবসাইটের নিউজ ও মিডিয়া রিলিজ সেকশনেও এমন কোনো খবর জানানো হয়নি। বরং সাকিবকে নিয়ে গত ২৬ শে মার্চ বিসিবির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি মিডিয়া রিলিজ পাওয়া যায়, যেখানে বলা হয় এক বছর পর টেস্টে ফিরছেন সাকিব আল হাসান, শ্রীলংকার সাথে দ্বিতীয় টেস্ট খেলবেন তিনি। দেখুন--
অর্থাৎ সাকিবের অবসরের দিন রাষ্ট্রীয় ছুটি ঘোষণা করা হবে বলে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বরাতে যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে তা ভিত্তিহীন।
প্রসঙ্গত গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাগুরা-১ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ সদস্য।
সুতরাং সাকিব আল হাসানের অবসরের দিন রাষ্ট্রীয় ছুটি ঘোষণা করা হবে বলে বিসিবি সভাপতির বরাতে ভিত্তিহীন তথ্য প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।