সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক পেজ, আইডি ও গ্রুপ থেকে একটি ওয়েবসাইটের লিংক পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ শুরুর পর শান্তিতে নোবেল জয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইসরায়েলকে ১০০ কোটি টাকা অর্থ সহায়তা করেছেন। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ১৬ অক্টোবর 'Lekhak Bhattacharjee' নামের একটি আইডি থেকে লিংকটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়, "জ্ঞান ও ধর্ম ব্যবসায়ীদের লজ্জা পাওয়া উচিত।। আমেরিকার প্রেমে পড়ে যে মানুষ নিজের দেশের সাথে বেইমানি করতে পারে সে নিজের ধর্মের সাথেও বেইমানি করবে এটাই স্বাভাবিক। আমি অবাক হইনি, ড. ইউনূস বাংলাদেশ থেকে ট্যাক্স এবং শ্রমিকের মজুরির টাকা ফাঁকি দিয়ে ইসরাইলকে ১ কোটি ডলার (১০০ কোটির বেশি টাকা) অনুদান হিসেবে দিয়েছে। যে টাকা ইসরাইল খরচ করবে ফিলিস্তিনের অসহায় মুসলমানদের হত্যা করার অস্ত্রের পেছনে। উদ্দেশ্য একটাই, আমেরিকার তোষামোদী করা।" নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ইসরাইলকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অর্থ সহায়তার দাবিটি সঠিক নয়। ড. ইউনূস বা তার সংশ্লিষ্ট কোনো সংস্থার ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে এমন কোনো খবর বা বিবৃতি খুঁজে পাওয়া যায়নি। বরং এই তথ্যটি সঠিক নয় বলে নিশ্চিত করেছে ইউনুস সেন্টার।
আলোচ্য দাবির উৎস:
গত ১৩ অক্টোবর বাংলা ইনসাইডার নামের একটি ওয়েবসাইটে "ইসরায়েলকে ১০০ কোটি টাকার সহায়তা দিলেন ড. ইউনূস" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইসরায়েলের মানবিক বিপর্যয়ের কথা বলে সেই দেশকে একশো কোটি টাকা সহায়তা দিয়েছেন। প্রতিবেদনটিতে উক্ত তথ্যের উৎস হিসেবে "ইসরায়েলের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক সাম্প্রতিক বিবৃতি"কে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ইসরায়েলের ওপর হামাসের আক্রমণের পর যে সমস্ত ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান তাদেরকে সহায়তা দিয়েছে তাদের প্রতি ইসরায়েল সরকার কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে। এই সহায়তা দানকারীদের তালিকায় গ্রামীণ আমেরিকা রয়েছে।
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে, ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইটে এ ধরণের আর্থিক সহায়তার বিষয়ে কোনো বিবৃতি বা খবর পাওয়া যায়নি। নিচে স্ক্রিনশট দেখুন--
আবার আলোচ্য প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ আমেরিকা নামক একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ইসরাইলকে এই আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে। কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গ্রামীণ আমেরিকার ওয়েবসাইটেও এ ধরণের কোনো বিবৃতি বা খবর খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্ক্রিনশট দেখুন--
এদিকে, আলোচ্য দাবিটি ভুয়া বলে নিশ্চিত করেছে ড. ইউনুসের অন্যতম প্রতিষ্ঠান ইউনুস সেন্টার। প্রতিষ্ঠানটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ 'Yunus Centre' থেকে আলোচ্য দাবির ব্যাপারে একটি পোস্ট করা হয়েছে। যেখানে নিশ্চিত করা হয়েছে, ড. ইউনুসের পক্ষ থেকে ইসরাইলকে ১০০ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তার দাবিটি ভুয়া। পোস্টটি দেখুন--
অর্থাৎ সম্প্রতি ড. ইউনুস ইসরাইলকে ১০০ কোটি টাকার সহায়তা প্রদান করেননি।
সুতরাং ড. ইউনূস ইসরাইলকে ১০০ কোটি টাকার সহায়তা প্রদান করেছেন বলে যে প্রচার করা হচ্ছে, তা বিভ্রান্তিকর।