সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে গণমাধ্যমের পেজ এবং বিভিন্ন গ্রুপে একটি খবরের লিংক পোস্ট করে বলা হচ্ছে, পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের গাড়িবহরে হামলা চালানো হয়েছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ৯ নভেম্বর বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম 'সময় টেলিভিশন' এর আন্তর্জাতিক খবর বিষয়ক ফেসবুক পেজ 'আন্তর্জাতিক সময়' থেকে "অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের গাড়িবহরে হামলা চালানো হয়েছে।" ক্যাপশনে একটি পোস্ট করা হয়। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফেসবুক পোস্টে সংযুক্ত লিংকে ক্লিক করে সময় টেলিভিশন এর অনলাইন সংস্করণের বিস্তারিত খবরে দেখা যায়, "অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের গাড়িবহরে হামলা চালানো হয়েছে। এতে তার একজন দেহরক্ষী নিহত হয়েছেন। হামলার কয়েক ঘণ্টা পর এর দায় স্বীকার করেছে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের সশস্ত্র বাহিনী ‘সন্স অব আবু জান্দাল’।" দেখুন--
এছাড়াও, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচ্য খবরটির সাথে একটি ভিডিও সংযুক্ত করে "মাহমুদ আব্বাসের উপর হামলার ভিডিও" এবং হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘সন্স অব আবু জান্দাল’ শীর্ষক দুইটি তথ্য প্রচার করা হয়েছে। এমন কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে। এ জাতীয় দুইটি ভিন্ন পোস্টের (দায় স্বীকার সংক্রান্ত পোস্ট-বামে এবং ভিডিও সংযুক্ত পোস্ট- ডানে) কোলাজ দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, মাহমুদ আব্বাসের উপর হামলার ঘটনাটি সত্য নয়। এমনকি ফিলিস্তিনের 'সন্স অব আবু জান্দাল' গ্রুপ এ জাতীয় কোনো হামলার দায় স্বীকার করেনি। গত ৭ নভেম্বর পশ্চিম তীরের রামাল্লার কাছে অবস্থিত জালাজোন শরণার্থী শিবিরে মাদক পাচারকারীদের উপর পুলিশি অভিযানের ভিডিও যুক্ত করে আলোচ্য খবরটি প্রচার করা হয়েছে।
কি-ওয়ার্ড সার্চ এর মাধ্যমে ফরাসি গণমাধ্যম ‘ফ্রান্স২৪’-এ গত ৯ নভেম্বর ‘Fake story about assassination attempt on Mahmoud Abbas goes viral’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি তথ্য-যাচাই প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, "ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের উপর হামলার ঘটনাটি ভুয়া এবং এই খবরের সাথে প্রচারিত ভিডিওটি শরণার্থী শিবিরে মাদক পাচারকারীদের উপর পুলিশি অভিযানের ভিডিও"। প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট দেখুন--
পাশাপাশি, গ্রিস ভিত্তিক তথ্য-যাচাই প্রতিষ্ঠান ‘Ellinika Hoaxes’ এ গত ১০ নভেম্বর "ফিলিস্তিনি নেতা মাহমুদ আব্বাসের গাড়িবহরে কথিত হামলার বিষয়ে ভুল তথ্য (অনূদিত)" শিরোনামে একটি তথ্য-যাচাই প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, "গ্রিসের ফিলিস্তিনি এম্বাসি কর্তৃপক্ষ-ও রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাসের উপর হামলার সংবাদকে 'মিথ্যা' হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। মাহমুদ আব্বাসের গাড়িবহরে কথিত হামলার জন্য 'সন্স আবু জান্দাল' গোষ্ঠীর দায় স্বীকার করার তথ্যটিও অপ্রমাণিত এবং অসত্য"। প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট দেখুন--
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সিএনএন এর তুরস্কের আঞ্চলিক সংস্করণ 'সিএনএন তুর্ক' টেলিভিশনের অনলাইন সংস্করণে খবরটি প্রচারিত হলেও পরে খবরটি অনলাইন থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এমনকি গ্রিসের অনেক সংবাদমাধ্যম থেকেও খবরটি সরিয়ে নেওয়ার তথ্য পাওয়া যায়।
এছাড়াও, বিষয়টি নিয়ে তথ্য-যাচাই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইউরোপিয়ান টেলিভিশন নেটওয়ার্ক 'ইউরোনিউজ', তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা 'আনাদোলু এজেন্সি', ফিলিস্তিনের তথ্য-যাচাই প্রতিষ্ঠান 'তাকান', তাইওয়ানের তথ্য-যাচাই প্রতিষ্ঠান 'তাইওয়ান ফ্যাক্ট-চেকিং সেন্টার'।
অর্থাৎ গত ৭ নভেম্বর পশ্চিম তীরের রামাল্লার কাছে অবস্থিত জালাজোন শরণার্থী শিবিরে মাদক পাচারকারীদের উপর পুলিশি অভিযানের ভিডিও যুক্ত করে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের উপর হামলার সংবাদ প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং গণমাধ্যমে মাদক পাচারকারীদের উপর পুলিশি অভিযানের ভিডিওর উপর ভিত্তি করে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের উপর হামলার ঘটনা হিসেবে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।