সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে পোস্ট করে বলা হচ্ছে, গত ১৯ মার্চ মাদারীপুরে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত সুইটি আলম সুরভী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ১৯ মার্চ দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলোর ফেসবুকে পেজে "গোপালগঞ্জ থেকে তাঁরা উঠেছিলেন ইমাদ পরিবহনের বাসটিতে। দুর্ঘটনায় বাবা মাসুদ মিয়া বেঁচে গেলেও প্রাণ হারিয়েছেন সুইটি।" ক্যাপশনে একটি ফেসবুক পোস্ট করা হয়। ওই পোস্টে যুক্ত করা হয় 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেয়ের ফেরা হলো না ক্যাম্পাসে, বাবার আহাজারি' শিরোনামের একটি সংবাদ। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থ্যাৎ পোস্টে যুক্ত ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে পড়তেন সুইটি। কিছুদিন আগে ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ সদরের পাঁচুরিয়া এলাকায় গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন। আজ রোববার সকালে বাবা মো. মাসুদ মিয়ার সঙ্গে বাসে ঢাকায় ফিরছিলেন তিনি। গোপালগঞ্জ থেকে তাঁরা উঠেছিলেন ইমাদ পরিবহনের বাসটিতে। দুর্ঘটনায় বাবা মাসুদ মিয়া বেঁচে গেলেও প্রাণ হারিয়েছেন সুইটি।" অর্থ্যাৎ দাবি করা হয়, দুর্ঘটনায় নিহত সুইটি আলম সুরভী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টটির দাবি সঠিক নয়। গত ১৯ মার্চ মাদারীপুরে গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী ইমাদ পরিবহনের একটি বাস দুর্ঘটনায় নিহত সুইটি আলম সুরভীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন বলে সুইটির বাবা বুম বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেছেন। গণমাধ্যমের সুত্রে জানা গেছে, সুইটি একটি বেসরিকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন।
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে অনলাইন পোর্টাল বাংলা নিউজের ওয়েবসাইটে 'এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্রী বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নিহত সুইটি আলম সুরভী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ছিলেন। স্ক্রিনশট দেখুন--
এর সুত্রধরে সার্চ করে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সুইটির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়টির পক্ষ থেকে দেয়া একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত শোক বার্তায় বলা হয়, সুইটি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। দেখুন--
সুইটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মর্মে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে ঐদিনই এ নিয়ে ভোরের কাগজ পত্রিকা অনুসন্ধান করে 'মাদারীপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সুইটি ঢাবির শিক্ষার্থী নয়' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, "মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় ঢাকাগামী ইমাদ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস রোববার ভোরে খাদে পড়ে ২০ জন যাত্রী নিহতের ঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইংরেজি বিভাগের ২য় বর্ষের সুইটি (২০) নামের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর বিষয়টি প্রচার করা হলেও ওই নামের কোনো শিক্ষার্থী বিভাগটিতে নেই।" স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়া দি ডেইলি ক্যাম্পাসও একই দাবিতে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
এদিকে এ বিষয়ে জানতে নিহত সুইটি আলম সুরভীর বাবা মাসুদ আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে সুইটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন না বলে তিনি বুম বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেন।
গত ১৯ মার্চ মাদারীপুরে পদ্মাসেতু এক্সপ্রেসওয়েতে এক সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন সুরভী।
সুতরাং সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত সুইটি আলম সুরভীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।