সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে একটি অসুস্থ শিশুর ছবি শেয়ার করে বলা হচ্ছে, শিশুটির নাম অনিক দাস এবং তার বাড়ি কুমিল্লায়। কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত শিশুটি টাকার অভাবে চিকিৎসা পাচ্ছে না। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
১ ঘন্টা আগে (৩০ সেপ্টেম্বর) 'গাড়ী কেনা বেচা ( Car Buy And Sell Group BD)' নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে 'মৌমিতা মজুমদার' নামে একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে একটি অসুস্থ শিশুর ছবি পোস্ট করে বলা হয়, "ভিক্ষুকের মত নির্লজ্জ ভাবে পায়ে ধরে শুধুই শেয়ার টা ভিক্ষা চাচ্ছি। সাহায্য করতে না পারলেও অন্তত একটি শেয়ার করুন আপনার শেয়ারের মাধ্যমে হয়তো কোনো বিত্তবান, দানশীল ব্যক্তির নজরে পড়বে। হিন্দু,মুসলিম ভেদাভেদ ভুলে আসুন অসহায় পরিবারটির পাশে দারাই। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই। অনিক দাস অনেকদিন ধরে কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত। বাবা বাদল দাস ও মা রীনা মন্ডল (গার্মেন্টস কর্মী) অনেকদিন ধরেই চিকিৎসা চালিয়ে আসছেন।কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কিছুদিন ধরে চিকিৎসাধীন আছে। চিকিৎসার জন্য ভারতের মুম্বাইয়ে টাটা মেমোরিয়াল হসপিটালে নিয়ে যেতে পারলে অনেক কম খরচে চিকিৎসা করানো যাবে তাই সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য ডাক্তার সাহেবরা পরামর্শ প্রদান করছেন এতে করে ১০/১২ লক্ষ টাকার প্রয়োজন।যা গার্মেন্টসে কর্মরত বাবা মায়ের জন্য অনেকটাই অসম্ভব । অসহায় বাবা ছেলেকে বাচাতে আমাদের সবার কাছে সাহায্যর জন্য হাত পেতেছেন আসুন আমরা অসহায় বাবার পাশে দারাই। নিজের মনে করে ৫০,১০০,৫০০,১০০০,৫০০০ যাই পারি না কেনো সহযোগিতার হাত প্রসারিত করি। মহান স্রষ্টা অবশ্যই অনিককে ভালো করে দিবেন সবাই তার জন্য আশির্বাদ করবেন। #এখনওপ্রয়োজন ১ লক্ষ্য ২০ হাজার টাকা দয়া করে সবাই এগিয়ে আসুন। সাহায্য পাঠানোর ঠিকানাঃ-(বাচ্চার মা) বিকাশ:01333980654 (পারসোনাল) নগদঃ-01333980654 (পারসোনাল) বাড়ি,সদর দক্ষিণ, শাসনগাছা,স্টেশন থেকে ৫০০ মিটার ভিতরে, কুমিল্লা।" ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
পোস্টে সংযুক্ত ছবিগুলো দেখুন আলাদাভাবে---
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। ছবির শিশুটি বাংলাদেশের অনিক দাস নয় বরং ভারতের শ্রেয়ান, যে লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়াতে আক্রান্ত।
ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ভারতের অসহায় ও দুঃস্থদের জন্য অর্থ উত্তোলনকারী (ক্রাউড ফান্ডিং) সংস্থা 'Ketto'-র ওয়েবসাইটে 'Battling cancer- my only child is struggling. Please save him!' শিরোনামে নিবন্ধে আলোচ্য পোস্টের শিশুটির হুবহু ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। এছাড়াও, নিবন্ধটির ভিতরে আরো কিছু ছবি সংযুক্ত করা হয়। ওই ওয়েবসাইটে শিশুটির সংযুক্ত ছবি দেখে বোঝা যায় যে আলোচ্য ছবির শিশু এবং ওয়েবসাইটের শিশুটি একই জন। তবে, ১০ মাস আগে শিশুটির জন্য পর্যাপ্ত অর্থ সংগ্রহ করার পরে তাঁর জন্য অর্থ সংগ্রহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ ভারতের অসুস্থ শিশু শ্রেয়ানের ছবিকে বিভ্রান্তিকরভাবে বাংলাদেশের অনিক দাসের বলে দাবি করা হচ্ছে।
তবে বাংলাদেশের কুমিল্লায় অনিক দাস নামের কোনো শিশু অসুস্থ কিনা এবং তার সহায়তা প্রয়োজন কিনা-- তা আলাদাভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
সুতরাং ভারতের অসুস্থ শিশুর ছবি দিয়ে তাকে বাংলাদেশের শিশু দাবি করে অর্থ সাহায্য চাওয়া হচ্ছে ফেসবুকে, যা প্রতারণাপূর্ণ।