সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে বলা হচ্ছে, পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরকম একটি পোস্ট দেখুন এখানে।
গত ২৪ জুন "ফখরুল ইসলাম আলমগীর" নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে একটি রিলস ভিডিও পোস্ট করা হয়। ওই ভিডিও ফুটেজের সাথে একজন উপস্থাপককে বলতে শোনা যায়, "আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। দুপুরে পুলিশের এক সাব-ইন্সপেক্টর তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়।" ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য রিল পোস্টের বক্তব্যটি সত্য নয়। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে পুলিশ সদস্যের গুলিতে ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নব কিশোর দাসের নিহতের সংবাদ প্রচার করে যমুনা টিভি। যমুনা টিভির সেই প্রতিবেদনের আংশিক ভয়েস জুড়ে দিয়ে ইউটিউব থেকে অ্যাম্বুল্যান্স সার্ভিসের একটি ভিডিওর আংশিক ফুটেজ কেটে যুক্ত করে আলোচ্য ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
আলোচ্য রিলস পোস্টের ভিডিওটির কি-ফ্রেম কেটে নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে "Demonracer2" নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে "Ambulances Responding Compilation - All Time Best" শিরোনামে অনেকগুলো ভিডিওক্লিপ যুক্ত অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের একটি কম্পাইলেশন ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। প্রায় চার বছর আগে ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ইউটিউবে আপলোড করা অ্যাম্বুলেন্সের কম্পাইলেশন এই ভিডিওটিতে যুক্ত প্রথম ক্লিপটি এবং আলোচ্য ভিডিওটি হুবহু এক। ইউটিউব ভিডিওটি দেখুন--
আলোচ্য ভিডিওটির একটি কি-ফ্রেম (বামে) এবং ইউটিউব ভিডিও থেকে প্রাপ্ত একটি কি-ফ্রেমের (ডানে) তুলনামূলক সাদৃশ্য দেখুন--
এদিকে, আলোচ্য ভিডিওটি থেকে প্রাপ্ত তথ্যের কি-ওয়ার্ড ধরে সার্চ করে অনলাইন পোর্টাল ঢাকা পোস্টের ওয়েবসাইটে "মারা গেছেন পুলিশ কর্মকর্তার গুলিতে আহত ওড়িশার মন্ত্রী" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গোপাল দাস নামের এক পুলিশ কর্মকর্তার গুলিতে ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নব কিশোর দাস মারা গেছেন। গত ২৯ জানুয়ারি উড়িষ্যা রাজ্যের ঝাড়সুগুদা জেলায় তাকে গুলি করা হয়। স্ক্রিনশট দেখুন--
ডেইলি স্টারের বাংলা ভার্সনের ওয়েবসাইট এবং নিউজ টোয়েন্টিফোরের অনলাইন ভার্সনেও একই সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়।
এর সুত্র ধরে সার্চ করে উড়িষ্যার স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিহতের খবরটি বেসরকারি টেলিভিশন যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে খুঁজে পাওয়া যায়। আর আলোচ্য ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে দেখা যায় ভিডিওটি দুটি ক্লিপে বিভক্ত। যেখানে ভিডিওটির প্রথম অংশে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিচয় উল্লেখ করা হয় এবং দ্বিতীয়াংশে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ার খবর ও তাকে পুলিশের এক সাব-ইন্সপেক্টর গুলি করার খবর উপস্থান করা হয়। যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলের ওই প্রতিবেদনটির ৪ সেকেন্ড থেকে ৯ সেকেন্ড পর্যন্ত বক্তব্য এবং আলোচ্য ভিডিওটিতে যুক্ত থাকা দ্বিতীয় ক্লিপটির বক্তব্য হুবহু এক। যমুনা টিভির ইউটিউব ভিডিওটি দেখুন--
অর্থ্যাৎ যমুনা টিভির উক্ত খবরের ৪ সেকেন্ড থেকে ৯ সেকেন্ড পর্যন্ত ভিডিওর ভয়েস কেটে নিয়ে, এর আগে ভয়েস ওভারে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্ত করে, ভিডিও ভার্সনে অন্তত ৪ বছর আগে ইউটিউবে আপলোড করা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের ভিডিও জুড়ে দিয়ে আলোচ্য বিভ্রান্তিকর ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়া, বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড ধরে সার্চ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুর কোনো সংবাদ গণমাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যু হলে অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হওয়ার কথা।
সুতরাং ভিন্ন দুটি ভিডিওক্লিপ এডিটের মাধ্যমে যুক্ত করে সেখানে ভয়েস ওভারও এডিট করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুর ভুয়া খবর প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।