সামাজিক মাধ্যমে একটি মরদেহের ছবির সাথে বিলাসবহুল গাড়ি, হেলিকপ্টার ও শয়নকক্ষের একাধিক ছবি জুড়ে দিয়ে দাবি করা হচ্ছে, এটি কুয়েতের সবচেয়ে ধনী 'নাসসি আল খিরকি' নামের এক ব্যক্তির মরদেহের ছবি; যিনি তাঁর সম্পদের পাহাড় রেখে মারা গেছেন। ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপ থেকে একই রকম এসব ছবি ও তথ্যসহ পোস্ট করা হয়েছে। দেখুন এমন কিছু পোস্ট এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ১২ জুন 'আম্মুর আদরের মিষ্টি ছেলে' নামের একটি ফেসবুক পেইজ থেকে তিনটি ছবি পোস্ট করে বলা হয়, কুয়েতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি 'নাসসি আল খিরকি' সম্পদের পাহাড় রেখে মারা গেছেন। পোস্ট করা ছবিগুলোর একটিতে কফিনে শায়িত সাদা পোশাক পরা এক ব্যক্তি, দ্বিতীয়টিতে একটি হেলিকপ্টার ও গাড়ি এবং তৃতীয়টি বিলাসবহুল একটি শয়নকক্ষ দেখা যাচ্ছে। দেখুন পোস্টটির স্ক্রিনশট--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, কুয়েতের ধনকুবেরের মৃত্যুর দাবি সংক্রান্ত পোস্টটি বিভ্রান্তিকর। প্রথমত, ছবিতে যে ব্যক্তিকে কুয়েতের 'নাসসি আল খিরকি' বলে দাবি করা হচ্ছে, সেটি ভিন্ন ব্যক্তির ছবি। রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা গেছে, উক্ত ছবিটি মূলত ক্যারিবীয় দ্বীপ রাষ্ট্র ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর এক ধনকুবেরের মরদেহের ছবি। 'শেরন সুখেদো' নামের ৩৩ বছর বয়সী এই ব্যক্তিকে রাস্তায় গুলি করে হত্যা করা হয়। দেখুন বৃটিশ গণমাধ্যম ডেইলি মেইলে প্রকাশিত তার ছবিসহ একটি প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট--
এছাড়া বৃটেন ভিত্তিক আরেকটি গণমাধ্যম মেট্রো ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল একই ছবিসহ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। দেখুন সেই লিংক এখানে।
ফলে এটি কুয়েতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির দাবি করা বিভ্রান্তিকর। এছাড়া বুম বাংলাদেশ নানাভাবে অনলাইন সার্চ করেও 'নাসসি আল খিরকি' নামে কুয়েতের কোনো ধনী ব্যক্তির সন্ধান পায়নি। তবে কাছাকাছি নামের একজন কুয়েতি ব্যবসায়ীর সন্ধান পাওয়া গেছে যার নাম 'নাসের আল-খারাফি' এবং যিনি ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকাভুক্ত ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকাভুক্ত ধনকুবের ছিলেন। দেখুন ফোর্বস ম্যাগাজিনে তার প্রোফাইল--
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, এই ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ২০১১ সালে মারা যান। দেখুন সেই প্রতিবেদন এখানে।
এছাড়া, বুম বাংলাদেশ পোস্টের বাকি দুটি ছবিও যাচাই করতে চেয়েছে। বিমান ও বিলাসবহুল গাড়ি সংক্রান্ত দ্বিতীয় ছবিটি যাচাই করতে গেলে অসংখ্য ওয়েবসাইটে ছবিটি পাওয়া গেছে। দেখুন এখানে ও এখানে। ফলে ছবিটি সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে কিছু জানা সম্ভব হয়নি।
একইভাবে পোস্টের তৃতীয় বা বিলাসবহুল শয়নকক্ষের ছবিটি একাধিক ইকমার্স সাইটে পাওয়া গেছে। এর বাইরে ছবিটি সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়নি। দেখুন স্ক্রিনশট--
অর্থাৎ ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর এক ব্যক্তির মরদেহের ছবির সাথে বিলাসবহুল যান ও শয়নকক্ষের ভিন্ন দুটি ছবি একসাথে পোস্ট করে কুয়েতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির মৃত্যুর খবর প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে; যা বিভ্রান্তিকর।