সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একাধিক আইডি থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হচ্ছে, শেখ হাসিনা ভারতের অন্ধ্র প্রদেশে পৌঁছেছেন এবং এত বড় ঘটনার পরও তিনি স্বাভাবিক আছেন, কর্মীদের দেখে তিনি দৌঁড়ে কাছে আসছেন। এরকম কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২০ অক্টোবর 'বাটইয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ' নামে একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হয়, "আমার নেত্রী কে অনেকদিন পর দেখলাম। এতো বড়ো দূর্ঘটনা ঘটার পর ও চেহারা তে একটুও বিষন্নতার চাপ পর্যন্ত নাই। উনার সাহস দেখে আমরা আরো অকুতোভয় হয়। কর্মীদের কাছে কতটা টান নিয়ে দৌঁড় দিয়ে আসছে। দীর্ঘজীবী হউন প্রাণের নেত্রী। ভারতের অন্ধ প্রদেশে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতিমধ্যে ভারত সরকার তাকে একের পর এক ভিআইপি প্রটোকল দিয়েই যাচ্ছে। বাংলাদেশের মিডিয়া গুলোকে তার কোন নিউজ প্রচার করতে দেওয়া হচ্ছে না।"। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০১৭ সালের জুন মাসে সুইডেনে রাষ্ট্রীয় সফরকালে দেশটির রাজধানী স্টকহোমে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করতে আসেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। ওইসময়ে আলোচ্য ভিডিওটি ধারণ করা হয়।
ভিডিওটির ব্যাপারে জানতে ভিডিওটি থেকে কি-ফ্রেম কেটে নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে অনলাইন পোর্টাল ঢাকা টাইমসের ওয়েবসাইটে ২০১৭ সালের ১৬ জুন "কর্মীদের কাছে দৌঁড়ে গেলেন শেখ হাসিনা" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচ্য ছবিটির মত একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, "সুইডেনে স্বাগত জানাতে আসা নেকা-কর্মীদেরকে দেখে যেভাবে তাদের কাছে ছুটে গেছেন শেখ হাসিনা, সেটি বিরলেই বলা চলে। হোটেলে ঢুকার সময় রাস্তার অপর পাশে নেতা-কর্মীদেরকে দেখতে পেয়ে তিনি হালকা দৌঁড়ে ছুটে যান তাদের কাছে। শুক্রবার সুইডেনের রাজধানী স্টোকহোমে এই ঘটনা ঘটে। একটি অনুষ্ঠান শেষে শেখ হাসিনা যখন গ্র্যান্ড হোটেলে ঢুকছিলেন তখন সড়কের অপর পাশে নেতা-কর্মীরা জড়ো হয়ে দূর থেকেই নেত্রীকে দেখছিলেন। গাড়ি থেকে নেমে শেখ হাসিনা হোটেলে ঢোকার সময় ‘জয় বাংলা’ স্লোগান শুনে রাস্তার উল্টো দিকে তাকিয়ে দেখেন, তার সমর্থকরা সবাই দাঁড়িয়ে আছে দল বেঁধে। মুহূর্তেই হোটেলের দ্বারের উল্টোদিকে ছুটা শুরু করলেন শেখ হাসিনা। একটু দৌঁড় দিয়েই আগালেন তিনি। সঙ্গে থাকা নিরাপত্তা কর্মীরা প্রস্তুত ছিল না এর জন্য। সম্বিত ফিরে পেয়ে তারাও দৌঁড় দেন বঙ্গবন্ধু কন্যার সঙ্গে।" স্ক্রিনশট দেখুন--
ঢাকা ট্রিবিউনের ওই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে সার্চ করে ২০১৭ সালের ১৬ জুন 'Mamunur Rashid' নামে একটি একাউন্ট থেকে পোস্ট করা আলোচ্য ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। ফেসবুক পোস্টটি দেখুন--
পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে জাগো নিউজ অনলাইন পোর্টালে এ সংক্রান্ত সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়।
অর্থাৎ আলোচ্য ভিডিওটি গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর ভারতের কোথাও থেকে সাম্প্রতিক ধারণ করা নয়। বরং সাত বছর আগে ২০১৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রীয় সফরকালে সুইডেনে আলোচ্য ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছিল।
সুতরাং সুইডেনে ধারণ করা শেখ হাসিনার সাত বছরের পুরোনো ভিডিওকে সম্প্রতি ভারতের দাবি করে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।