সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে অসুস্থ এক শিশুর ভিডিও দিয়ে আর্থিক সাহায্য চাওয়া হচ্ছে। দেখুন এমন কিছু পোস্টের লিংক এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ১০ ডিসেম্বর '❣️❣️Abrarul Haque Asif Fan ❣️❣️' নামের ফেসবুক গ্রুপে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। ভিডিওটিতে অক্সিজেন পাইপে জড়ানো এক অসুস্থ শিশুকে দেখা যাচ্ছে। পোস্টে বলা হচ্ছে, খুলনার পাইকগাচা থানার চাঁদখালি ইউনিয়নের লতাপুর গ্রামের হতদরিদ্র মুহাম্মদ তাইজুল ইসলামের ছেলে শিশু তাজমুলের জন্ম থেকেই হার্টে ছিদ্র। শিশু তাজমুলের চিকিৎসার জন্য তিন লাখ টাকা প্রয়োজন। ভিডিওটির আবহে বর্ণনা থেকে জানা যাচ্ছে, শিশুটির পিতা নিজে ভিডিও করছেন এবং শিশুটির বয়স ৯ মাস। এছাড়া পোস্টের সাথে আর্থিক সাহায্য পাঠানোর জন্য মুঠোফোনে আর্থিক লেনদেন সেবা দাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ ও নগদের হিসাব নম্বরও যুক্ত করা আছে। ওই পোস্টের স্ক্রিনশট দেখুন--
ভিডিওটির একটি স্ক্রিনশট আলাদাভাবে দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ভিডিওটি কোনো বাংলাদেশি শিশুর নয়। একাধিক উৎস থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ভিডিওটি ভারতের ৪০ দিন বয়সী এক শিশুর। প্রথমে, ফেসবুকের ভাইরাল এই ভিডিওটি রিভার্স সার্চিং টুল দিয়ে ২০২০ সালে একাধিক মাধ্যমে পাওয়া গেছে। ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ এ 'Pragath Ponnanna' নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে এই ভিডিওটি পাওয়া গেছে। দেখুন--
সেখানে বলা হয়, 'The great driver who had saved the life of an 40day old baby and hats off to you sir'। অর্থাৎ একজন মহৎ গাড়ি চালক ৪০ দিন বয়সী এক শিশুর জীবন বাঁচিয়েছেন।
এছাড়া টুইটারেও ভিডিওটি পাওয়া গেছে যেটি পোস্ট করা হয়েছে ২০২০ সালে। দেখুন--
Real hero of #ambulancediver 40 day baby heart operation only 4 hours time 352km
— Tirupati Tarak 🇮🇳 (@tirupatitarak31) February 8, 2020
Ambulance driver reach hats off Sir 🚑🙏🙏 Thanks for publick people's police 🙏 pic.twitter.com/i6uy0Odiqr
টুইটারের এই পোস্টে বলা হচ্ছে, ৪০ দিন বয়সী শিশুকে অপারেশন করানোর জন্য ৪ ঘন্টায় ৩৫২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছেন এ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার, তিনিই প্রকৃত নায়ক। কিন্তু এ দুটো উৎস থেকে ভিডিওটির ব্যাপারে খুব বেশি তথ্য জানা যায়না।
তবে ভিডিওগুলো থেকে এতটুকু নিশ্চিত হওয়া গেছে ভিডিওটি সাম্প্রতিক কোনো সময়ের নয়। পরবর্তীতে এ দুটি ভিডিও থেকে প্রাপ্ত তথ্য দিয়ে কিওয়ার্ড সার্চ করে ভিডিওটি ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যমে পাওয়া গেছে। ২০২০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি 'Pioneer Haryana' নামের একটি ভারতভিত্তিক সংবাদমাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেলে পাওয়া গেছে। এতে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের ম্যাঙ্গালোরের ৪০ দিন বয়সী এক শিশুকে ব্যাঙ্গালোর পর্যন্ত নিয়ে আসেন এক এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার। পুলিশ এবং ভারতীয় নাগরিকদের যৌথ সহায়তায় বিনা জ্যামে সাড়ে তিনশত কিলোমিটার পাড়ি দেন মাত্র ৪ ঘন্টায়। এছাড়া সেই এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার নেননি কোনো পারিশ্রমিক। দেখুন শিশুর সেই ভিডিওসহ পূর্ণ প্রতিবেদনটি--
এছাড়া, এ সংক্রান্ত একাধিক প্রতিবেদন পাওয়া গেছে ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলোতে। টাইমসনাওনিউজ এ প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ভিডিওর সেই অসুস্থ শিশুটির নাম সফিউল আজমান এবং সে ভারতীয়। শিশুটি মূলত জটিল হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলো এবং জরুরি অস্ত্রপাচার প্রয়োজনে তাকে এ্যাম্বুলেন্সে করে ম্যাঙ্গালোর থেকে ব্যাঙ্গালোরের শ্রী জয়দেব ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওভাসকুলার সাইন্স এন্ড রিসার্চ ইন ব্যাঙ্গালোর হাসপাতালে নেয়া হয়। প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল ২০২০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি। দেখুন প্রতিবেদনটি--
প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে। আরো পড়ুন টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন।
মূলত ২০২০ সালের ভারতের অসুস্থ শিশুর সেই ভিডিওটির সাথে আলাদা ভয়েস যুক্ত করে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে শিশুটির পিতা দাবি করে আর্থিক সাহায্য চাওয়া হচ্ছে।
অর্থাৎ প্রায় দুই বছর আগের ভারতের অসুস্থ শিশুর ভিডিওর আবহে বর্ণনায় ভুয়া তথ্য দিয়ে তাকে বাংলাদেশি দাবি করে আর্থিক সাহায্য চাওয়া হচ্ছে যা বিভ্রান্তিকর এবং প্রতারণাপূর্ণ।