সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একাধিক ছবি দিয়ে দাবি করা হচ্ছে, সম্প্রতি নির্বাচনের দুর্নীতির ছবি তোলায় একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে কয়েকজন পুলিশ পেটাচ্ছে। দেখুন এমন কিছু পোস্টের লিংক এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ১৮ ডিসেম্বর 'মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মহা সচিব বি এনপি' নামের ফেসবুক পেইজ থেকে তিনটি ছবিসহ একটি পোস্ট করা হয়। ছবিতে দেখা যায়, সাদা পাঞ্জাবি পরা এক ফটোগ্রাফারকে বেশ কিছু পুলিশের সদস্য মিলে প্রহার করছে। পোস্টে বলা হয়, "বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থা এমনিতেই বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনে নি! এইদেশে সত্যি প্রকাশ করলেই মার খেতে হয়েছে সর্বস্তরের মানুষকে। নির্বাচনের দুর্নীতির ছবি তোলায় একজন বাপের সমান বয়স্ক মানুষকে কয়েকজন পুলিশ কিভাবে মেরেছে তা অবশ্যই কেউ ভুলেনি।" অর্থাৎ দাবি করা হচ্ছে, ছবির ব্যক্তিকে নির্বাচনে দুর্নীতির ছবি তোলায় মারা হচ্ছে। দেখুন সেই পোস্টের স্ক্রিনশট--
এরকম আরেকটি পোস্ট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, বয়স্ক ফটোগ্রাফারকে প্রহার করার ছবিগুলো ভিন্ন ঘটনার। রিভার্স ইমেজ সার্চিং টুল ব্যবহার করে ছবিগুলোর আসল উৎস খুঁজে পাওয়া গেছে। বিখ্যাত ফটো এজেন্সি 'গেটি ইমেজ' এ তিনটিসহ এই ঘটনার আরো কিছু ছবি পাওয়া গেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ২০০৬ সালের ১৫ এপ্রিল চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ বনাম অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ চলাকালে 'শামসুল হক টেংকু' নামের এক সাংবাদিককে লাঞ্ছনার অভিযোগে বেশ কিছু সাংবাদিক মাঠে প্রতিবাদ করে। এর প্রেক্ষিতে আরেক ফটোগ্রাফার জহিরুল হককে আক্রমণ করে পুলিশের কিছু সদস্য। দেখুন গেটি ইমেজে বর্ণনাসহ প্রথম ছবিটি--
ছবিটি বর্ণনাসহ দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
এছাড়া সেখানে ভাইরাল পোস্টের বাকি দুটি ছবিও পাওয়া গেছে। দেখুন--
এছাড়া সেই প্রতিবাদের আরেকটি ছবিও সেখানে পাওয়া যায় যেখানে সাদা পোশাক পরা ফটোগ্রাফার জহিরুল হকসহ একাধিক ফটোগ্রাফারকে দেখা যাচ্ছে। দেখুন--
গেটি ইমেজে এই ঘটনার সবগুলো ছবি দেখুন এই লিংকে।
ছবিগুলো তুলেছেন হামিশ ব্লেয়ার নামের অস্ট্রেলিয়ান এক ফটোগ্রাফার। ছবির ঘটনা সম্পর্কে আরো জানতে সেই ফটোগ্রাফারকে ইমেইল পাঠানো হলে তিনি জবাবে জানান, ছবিগুলো তার তোলা। তিনি আরো জানান, মূলত স্থানীয় এক সাংবাদিক খেলা শুরুর আগে মাঠে প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশের দ্বারা আক্রান্ত হন। তারপরে সেখানে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়।
উল্লেখ্য ভাইরাল ছবিতে আক্রান্ত ফটোগ্রাফার জহিরুল হক ২০১৪ সালে ভারতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। দেখুন এ সংক্রান্ত একটি খবর--
খবরটি পড়ুন এখানে।
সুতরাং ২০০৬ সালে ক্রিকেট মাঠে পুলিশ-সাংবাদিকদের সংঘাতের ছবিকে সাম্প্রতিক নির্বাচন সম্পর্কিত বলে দাবি করা হচ্ছে ফেসবুকে; যা বিভ্রান্তিকর।
(প্রতিবেদনে কিছু তথ্য নতুন করে সংযোজন করা হয়েছে)