সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একাধিক প্রোফাইল ও পেজ থেকে একটি পোস্ট শেয়ার করে বলা হচ্ছে, কুষ্টিয়ায় পুলিশ কমকর্তা সৌমেন কুমার রায়ের গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছে। দেখুন এমন দুটি পোস্ট এখানে এবং এখানে।
গত ১৬ অক্টোবর 'Chakarian Got Tallent' নামের ফেসবুক গ্রুপে একটি পোস্ট করে দাবি করা হয়, কুষ্টিয়ায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী পুলিশ কর্মকর্তা সৌমেন কুমার রায় প্রকাশ্যে গুলি করে ৬ বছর বয়সী শিশু সহ এক মুসলিম দম্পতিকে হত্যা করেছে। আরো বলা হয়, ছবিতে সৌমেন কুমার রায়কে অস্ত্র হাতে দেখা যাচ্ছে। পোস্টের ছবিটিতে কালো পাঞ্জাবি পরা এক ব্যক্তিকে অস্ত্র উচিয়ে গুলি করতে দেখা যাচ্ছে। দেখুন সেই পোস্টটি এখানে--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ছবিতে অস্ত্র হাতে ব্যক্তির নাম সৌমেন কুমার রায় নয় এবং ঘটনাটি সাম্প্রতিকও নয়। ছবিটি ২০১৫ সালে কুষ্টিয়ায় ক্ষমতাসীন দলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ সংক্রান্ত একাধিক খবরের সাথে পাওয়া গেছে। রিভার্স ইমেজ সার্চিং টুল ব্যবহার করে ছবিটি দৈনিক প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনে পাওয়া গেছে যেটি প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৫ সালের ১৬ আগস্ট। 'কুষ্টিয়ায় শোক র্যালি শেষে সংঘর্ষে আ.লীগ কর্মী নিহত' শিরোনামের প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে--
এই খবরটির বিস্তারিত অংশে বলা হয়, ২০১৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সকালে কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগ শহরে র্যালি বের করলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এতে ছবির কালো পাঞ্জাবি পরিহিত ব্যক্তিটিকে বেশ কিছু রাউন্ড গুলি ছুঁড়তে দেখা যায়।
তবে প্রথম আলোর এই প্রতিবেদনটিতে অস্ত্র হাতে গুলি ছোঁড়া ব্যক্তিটির পরিচয় মেলেনি।
পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারী প্রথম আলোর আরেকটি প্রতিবেদনে গুলি ছোঁড়া ব্যক্তিটির পরিচয় পাওয়া যায়। 'গুলি ছুড়েছেন চাকরিচ্যুত এএসআই' শিরোনামের সেই প্রতিবেদনে উক্ত ব্যক্তির নাম নাম আনিচুর রহমান ওরফে আনিচ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তিনি একজন চাকরিচ্যুত পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই)। পরে তিনি সরকার দলীয় রাজনীতিতে নাম লেখান। প্রথম আলোর এই প্রতিবেদনে ক্যাপশনে ব্যক্তির পরিচয়সহ ছবিটি প্রকাশিত হয়। দেখুন সেই ছবিটি--
দেখুন সেই প্রতিবেদনটি এখানে।
এছাড়া কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাব্বিরুল আলম নিশ্চিত করেন যে, ছবিটি সৌমেন রায় নামের কোন পুলিশ কর্মকর্তার নয়। তিনি এ ব্যাপারে এএফপিকে বলেন, "এই ব্যক্তি সৌমেন রায় নন। বরং ছবিটি ২০১৫ সালে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগের র্যালি পরবর্তী দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের সময়ের।" দেখুন এএফপি'র ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদন এখানে।
উল্লেখ্য, ভাইরাল পোস্টটিতে দাবিকৃত পুলিশ কর্মকর্তা সৌমেন কুমার রায়েরও পরিচয় পাওয়া যায় একাধিক প্রতিবেদনে। মূলত সৌমেন রায় বাংলাদেশ পুলিশের একজন এএসআই ছিলেন যিনি এ বছরের জুন মাসে কুষ্টিয়ায় তার স্ত্রী, সৎ ছেলে এবং অপর এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করেন। তবে আগ্নেয়াস্ত্র হাতের ব্যক্তিটির সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই। দেখুন এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন এখানে।
এ সংক্রান্ত আরেকটি ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বুম বাংলা। দেখুন সেই প্রতিবেদন এখানে।
অর্থাৎ ২০১৫ সালের সরকার দলীয় কোন্দলে অস্ত্র হাতে ব্যক্তির ছবিকে সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার মধ্যে হিন্দু পুলিশ কর্মকর্তা কর্তৃক মুসলিম হত্যার বলে দাবি করা বিভ্রান্তিকর।