সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ভারতের ত্রিপুরায় মুসলিম-বিরোধী উত্তেজনার খবরের সাথে দুটি ছবির একটি কোলাজ পোস্ট করা হচ্ছে। দেখুন এমন একটি পোস্ট এখানে এবং এখানে।
গত ২ নভেম্বর 'Hafez Md Shafikul Islam' নামের ফেসবুক আইডি থেকে দুটি ছবির একটি কোলাজ ফটো পোস্ট করে বলা হয়, "ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে মুসলমানদের উপর বেশ কিছুদিন ধরে হামলা চলছে। মুসলিমদের বহু বাড়িঘর, দোকানপাট ও ১২টি মসজিদ পুড়িয়ে দিয়েছে কিছু উগ্র হিন্দুত্ববাদী জনগোষ্ঠী ও বজরং দলের লোকেরা"। এছাড়া ত্রিপুরার মুসলিমদের জন্যে প্রার্থনার আহ্বানও জানানো হয় সেই পোস্টে। পোস্টের সাথে যুক্ত ছবি দুটির প্রথমটি একটি অগ্নিকাণ্ডের। দ্বিতীয়টিতে রাস্তায় আগুন দিয়ে কিছু লোককে বিক্ষোভ করতে দেখা যাচ্ছে। দেখুন সেই পোস্টের স্ক্রিনশট--
ছবি দুটি আলাদাভাবে দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, কোলাজ ছবি দুটো ত্রিপুরার সাথে সম্পর্কিত নয়। রিভার্স ইমেজ সার্চিং টুল ব্যবহার করে দেখা গেছে, ছবি দুটি ভারতের কাশ্মীর এবং আসামের ভিন্ন ঘটনার। প্রথম ছবিটি সার্চ করে ভারত ভিত্তিক 'ফাউন্টেন ইংক' নামের একটি অনলাইন পোর্টালে ২০১২ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে পাওয়া গেছে। দেখুন সেই প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট--
প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে।
বিস্তারিত সার্চ করে ছবিটি পুলিৎজার সেন্টারের ওয়েবসাইটেও পাওয়া যায়। ২০১২ সালের ৫ নভেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে ছবিটির ক্যাপশনে বলা হয়, ওই বছরের জুন মাসে কাশ্মীরের শ্রীনগরে দস্তগীরের মাজারে আগুন লাগার ছবি এটি। দেখুন--
পুলিৎজারে প্রকাশিত সেই একই প্রতিবেদন পড়ুন এখানে।
এছাড়া, একই কিওয়ার্ড ব্যবহার করে সার্চ করে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ফার্স্টপোস্টে ২০১২ সালের ২৬ জুন প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে একই ছবির আরেকটি ভার্সন পাওয়া গেছে। সেখানেও বলা হয়, কাশ্মীরের দুইশ' বছরের পুরোনো দস্তগীর সাহেবের মাজারে আগুন লাগার ছবি এটি। সবগুলো খবরই প্রকাশিত হয় ২০১২ সালে। অর্থাৎ ছবিটি প্রায় ৯ বছরেরও বেশি সময় আগের। দেখুন ফার্স্টপোস্টের প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট--
প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে।
একইভাবে পোস্টের দ্বিতীয় ছবিটিও ত্রিপুরায় সাম্প্রতিক মুসলিম-বিরোধী উত্তেজনার সাথে সম্পর্কিত না। ২০১৯ সালের ১৩ ডিসেম্বরে ভারতের পত্রিকা 'দ্য প্রিন্ট' এ এই ছবিটি প্রকাশিত হতে দেখা গেছে। 'দ্য প্রিন্ট' ছবিটির ক্যাপশনে বলছে, এটি আসামের গুহাটিতে 'নাগরিকত্ব সংশোধন আইন-সিএএ' বিরোধী আন্দোলনের ছবি। দেখুন--
দ্য প্রিন্টের প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
এ ছবি সংক্রান্ত বুম বাংলাদেশের আরেকটি বিস্তারিত ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদন দেখুন এখানে।
অর্থাৎ ভারতের কাশ্মীর এবং আসামের দুটি ভিন্ন ঘটনার ছবিকে ত্রিপুরায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার খবরের সাথে পোস্ট করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।