সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি ও পেজ থেকে তিনটি ছবি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কুরআন রেখে আসার ঘটনায় প্রমাণসহ কুমিল্লা জেলার দক্ষিণ ছাত্রশিবির সভাপতি জয়নাল আবেদিনসহ চার শিবির নেতা গ্রেফতার হয়েছেন। কোনো পোস্টে ছবিগুলো কোলাজ হিসেবে আবার কোনো পোস্টে পৃথকভাবে পোস্ট করা হয়েছে। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গতকাল ১৫ অক্টোবর 'Khondaker Tareq Raihan' নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে ছবিগুলো পোস্ট করে লেখা হয়, "কুমিল্লায় পুজা মন্ডপে কোরআন শরীফ রেখে আসার ঘটনায় প্রমানসহ গ্রেপ্তার হয়েছে কুমিল্লা জেলার দক্ষিণ-এর শিবির সভাপতি জয়নাল আবেদিনসহ চার শিবির নেতা।" পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন-
অর্থাৎ পোস্টটিতে দাবি করা হচ্ছে, ছবির ব্যক্তিরা কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে কুরআন শরীফ রেখে আসার ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন।
কোলাজ ছবিটি আলাদাভাবে দেখুন-
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য ফেসবুক পোস্টের ছবিগুলো ২০১৭ ও ২০১৮ সালে ঘটা চট্টগ্রামের পৃথক দুটি গ্রেফতারের ঘটনার। কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে কুরআন পাওয়ার ঘটনার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
রিভার্স ইমেজ সার্চ করার পর, প্রথম ছবিটি ২০১৮ সালের ২৪শে জুন অনলাইন গণমাধ্যম সারাবাংলা ডট নেট-এ "চট্টগ্রামে গ্রেফতার জামায়াত-শিবিরের ২১০ নেতা-কর্মী কারাগারে" শিরোনামে প্রকাশিত খবরে খুঁজে পাওয়া যায়। খবরটির স্ক্রিনশট দেখুন--
একই ভাবে সার্চ করার পর দ্বিতীয় ছবিটা খুঁজে পাওয়া গেছে অনলাইন পত্রিকা বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোরের "চট্টগ্রামে জামায়াত-শিবিরের দুই শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার" শিরোনামে একটি খবরে, যা ২০১৮ সালের ২৩শে জুন প্রকাশিত হয়। খবরের বিবরণে লেখা হয়েছে-
"চট্টগ্রামে পর্যটন করপোরেশনের একটি মোটেল থেকে মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির ও ইসলামী ছাত্রশিবির মহানগর দক্ষিণের সভাপতিসহ ২১০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।" ছবিটির স্ক্রিনশট দেখুন-
অর্থাৎ প্রথম ও দ্বিতীয় ছবি একই ঘটনার এবং কুমিল্লার সাম্প্রতিক ঘটনার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
তৃতীয় ছবিটি খুঁজে পাওয়া গেছে বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোরের অন্য একটি খবরে। ২০১৭ সালের ১২ই মার্চ "চট্টগ্রামে আহলে হাদিসে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টায় জামায়াত-শিবির-হিযবুতকর্মীরা" শিরোনামে খবরের সাথে যুক্ত করা বেশ কয়েকটি ছবির মধ্যে আলোচ্য ছবিটিও খুঁজে পাওয়া যায়, যার বিবরণে পুলিশের বরাতে লেখা হয়েছে, চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিং থানার ঝর্ণাপাড়া এলাকা থেকে 'গোপন বৈঠকের' প্রস্তুতি নেয়ার সময় ১৭ জনকে গ্রেফতার করার ঘটনা এটি। খবরটির স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ এই ছবিটি ভিন্ন ঘটনার। যার মানে ভাইরাল পোস্টে যুক্ত করা তিনটি ছবির দুটি এক ঘটনার অন্যটি ভিন্ন ঘটনার এবং সব ছবিই চট্টগ্রামের। পাশাপাশি, খবরগুলোতে জয়নাল আবেদিন নামে কোনো ব্যক্তির বা শিবির নেতার গ্রেফতারি সম্পর্কেও কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ভাইরাল পোস্টের কোলাজ এবং পুরানো খবরের সাথে যুক্ত ছবিগুলোর পাশাপাশি স্ক্রিনশট দেখুন--
একাধিকবার সার্চ করে কুমিল্লার সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক উত্তেজনায় 'জয়নাল আবেদিনসহ চার শিবির নেতার গ্রেফতার হওয়া' সম্পর্কিত খবর মূলধারার গণমাধ্যমে খুঁজে পায়নি। বিষয়টি সম্পর্কে আরও নিশ্চিত হতে বুম বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কুমিল্লার স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। উল্লেখযোগ্য তথ্য পাওয়া গেলে পরবর্তিতে প্রতিবেদনটি তা যুক্ত করা হবে। তবে ভাইরাল পোস্টের ছবিগুলোর সাথে যে কুমিল্লায় কুরআন অবমাননার অভিযোগকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার সম্পর্ক নেই সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে বুম বাংলাদেশ।
এদিকে মূলধারার গণমাধ্যমে কুমিল্লায় বিশৃঙ্খলার ঘটনায় একাধিকজনকে গ্রেফতার করার খবর প্রকাশিত হয়েছে। তন্মধ্যে অনলাইন গণমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউন-এ গত ১৪ অক্টোবর "কুমিল্লায় বিশৃঙ্খলার ঘটনায় গ্রেফতার ৪৩" খবরে কেবল ফয়েজ উদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ১৫ অক্টোবর দৈনিক যুগান্তর অনলাইনে কুমিল্লার উক্ত ঘটনায় ফেসবুক ও ইউটিউবে অপপ্রচারের অভিযোগে কুমিল্লার র্যাব-১১ সিপিসি-২ এর অধিনায়ক মেজর সাকিব হোসেনের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপির বরাত দিয়ে গোলাম মাওলা (২৬) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করার কথা জানানো হয়েছে।
অর্থাৎ ভিন্ন ঘটনার কয়েক বছর পুরোনো ছবি দিয়ে কুমিল্লার সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার ঘটনায় চার শিবির নেতা গ্রেফতারের তথ্য প্রমাণহীন খবর প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।