সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি ও পেজ থেকে সম্প্রতি দুটি ছবি সহ এক পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, ছবিগুলো তুরস্কে সাম্প্রতিক দাবানল বন্ধের জন্য প্রার্থনা করে মুসল্লিদের নামাজের সময়ে তোলা। একটি ছবিতে একজন বয়স্ক লোক বৃষ্টির মধ্যে নামাজ পড়তে এবং অন্য ছবিতে বৃষ্টির মধ্যে একজনকে মাটিতে বসে মোনাজাত এবং আরেকজনকে নামাজ পড়তে দেখা যায়। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
'নীড়' নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ৯ আগস্ট এমন দুটি ছবি যুক্ত করে একটি পোস্টে লেখা হয়, "ভয়াবহ দাবানলে জ্বলছিল তুরস্ক। অতঃপর তুরস্কের দ্বীন মন্ত্রী হযরত মাওলানা ডক্টর আলী আরবাশ হাফিজাহুল্লাহ বৃষ্টির জন্য দোয়ার আহ্বান জানান। এটা শুনে নাস্তিক সে/ক্যু/লা/র/দের মধ্যে হাসাহাসি শুরু হয়। কারণ তখন আবহাওয়া অনুযায়ী বৃষ্টির আরো কিছু দিন দেরি ছিল। কিন্তু তাদের চমক ভাঙ্গল তখন যখন দোয়ার বরকতে নেমে এলো অঝোর ধারায় রহমতের বৃষ্টি। নিভে গেল দাবানল। কিন্তু গ্রীসে এখনো জ্বলছে ভয়াবহ আগুন।" অর্থাৎ দাবি করা হচ্ছে ছবি দুটি তুরস্কের সাম্প্রতিক দাবানলের সময়ে তোলা। দেখুন পোস্টটির স্ক্রিনশট--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ছবি দুটি ২০২০ সালের ভিন্ন ঘটনার। অর্থাৎ এক বছর পুরানো।
রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দুইটি ছবিকেই ২০২০ সালে তুরস্কের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হতে দেখা যায়। তন্মধ্যে, তুর্কি ভাষার গণমাধ্যম Yeni Akit-এর অনলাইন ভার্সনে ২০২০ সালের ১৯ জুন প্রকাশিত একটি ছবি-প্রতিবেদনে আলোচ্য দুটি ছবিই খুঁজে পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনটির শিরোনামের স্বয়ংক্রিয় অনুবাদ থেকে জানা যায়, "This is how they performed the Friday prayer in the pouring rain"।
প্রতিবেদনে যুক্ত করা ভাইরাল পোস্টের প্রথম ছবিটি দেখুন-
প্রতিবেদনে যুক্ত করা ভাইরাল পোস্টের ২য় ছবিটি দেখুন-
প্রতিবেদনটিতে যুক্ত করা ছবিগুলোর বিবরণে বলা হয়, ২০২০ সালে আঙ্কারার হাজি বায়রাম (Haci Bayram) মসজিদ প্রাঙ্গণে মুসল্লিদের জুমার নামাজ পড়ার দৃশ্য এটি। সে সময় করোনা মহামারীর ফলে তুরস্কে জনসমাগম এড়াতে মসজিদ বন্ধ ঘোষণা করা হলে মুসল্লিরা মসজিদ প্রাঙ্গণেই দূরত্ব মেনে বৃষ্টির মধ্যে নামাজ আদায়ে করেন। দুইটি ছবিই একই ঘটনার। অর্থাৎ সাম্প্রতিক দাবানলের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
এছাড়া ২০২০ সালে তুরস্কের একাধিক গণমাধ্যমে ছবিগুলো প্রকাশিত হতে দেখে গেছে। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে ও এখানে।
উল্লেখ্য গত দেড় সপ্তাহ ধরে তুরস্কের বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ দাবানল ছড়িয়ে পড়লে শনিবার (৭ আগস্ট) দেশটিতে ভারি বর্ষণে দাবানলের ভয়াবহতা কিছুটা কমে এসেছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে।
সুতরাং তুরস্কে দাবানল বন্ধের জন্য মুসল্লিদের প্রার্থনা ও নামাজের দৃশ্য বলে ২০২০ সালের ভিন্ন ঘটনার পুরানো ছবি প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।