ফেসবুক একটি 'চিঠি'র ছবি ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে। দাবি করা হচ্ছে, "Joe, you know I won" বাক্যটি লেখা ওই চিঠি ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ ছাড়ার আগে তার উত্তরসূরী জো বাইডেনের জন্য রেখে গেছেন।
বাংলাদেশে ছড়ানো তেমন কিছু ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট দেখুন-
মন্তব্যের অংশ দেখুন নিচে--
এরকম আরো অনেকে পোস্ট করেছেন চিঠিটি।
একই চিঠি অন্যান্য দেশেও টুইটার এবং ফেসবুকে ছড়িয়েছে।
ফ্যাক্ট চেক:
প্রথমত, "Joe, you know I won" লেখা চিঠিকে বাইডেনকে দেয়া ট্রাম্পের বিদায়ী চিঠি হিসেবে দাবি করলেও এর পক্ষে কোনো তথ্যসূত্র দিচ্ছেন না। চিঠিটি কোন সূত্র থেকে প্রকাশিত হয়েছে বা কারা প্রকাশ করেছেন তার কোনো তথ্যও নেই।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ইন্টারনেটে ঘেঁটে "Joe, you know I won" লেখা কোনো চিঠি বাইডেনকে দেয়ার কোনো খবর আমেরিকান অথবা অন্য কোনো দেশীয় নির্ভরযোগ্য সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যায়নি।
মার্কিন ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বাইডেনকে দেয়া ট্রাম্পের একটি চিঠির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেই চিঠি প্রকাশ করা হয়নি বলেও হোয়াইট হাউজের বরাতে এসব সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়েছে।
বুধবার হোয়াইট হাউজের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি Judd Deere প্রেসিডেন্টদের মধ্যকার যোগাযোগের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার কারণে সংবাদমাধ্যমের কাছে ট্রাম্পের চিঠির বিষয়বস্তু প্রকাশ করতে রাজি হননি।
এরপরে শপথ গ্রহণ শেষে সাংবাদিকদেরকে এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, তিনি ট্রাম্পের চিঠি পেয়েছেন। বাইডেন চিঠির প্রশংসা করে বলেছেন, "প্রেসিডেন্ট অত্যন্ত উদারচিত্তে একটি চিঠি লিখেছেন। যেহেতু এটি ব্যক্তিগত, তাই আমি তার সাথে কথা বলার আগে এ বিষয়ে কিছু বলবো না। কিন্তু চিঠিটি অত্যন্ত উদার ছিলো।"
এ সংক্রান্ত রয়টার্সের প্রতিবেদন দেখুন এখানে।
ট্রাম্প প্রশাসনের নিয়োগকৃত হোয়াইটহাউজের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি Judd Deere এবং চিঠির গ্রহীতা বাইডেন উভয়েই গোপনীতার কারণে চিঠির বিষয়বস্তু প্রকাশে অনীহা জানিয়েছেন। অর্থাৎ, বাইডেনকে ট্রাম্পের দেয়া চিঠিটি এখনও প্রকাশিত হয়নি। গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে কেউ প্রকাশ করলেও সেটি প্রকাশের প্রক্রিয়া ও নির্ভরযোগ্য কোনো বর্ণনা সামাজিক মাধ্যমে যারা চিঠিটি ছড়াচ্ছেন তাদের পোস্টে নেই। এতে স্পষ্ট যে, ট্রাম্পের নামে ভাইরাল হওয়া চিঠি বানোয়াট।
মূলত, গত কয়েকদিন ধরে একটি বিষয় আলোচিত হচ্ছিল যে, হোয়াইট হাউজের রীতি অনুযায়ী বিদায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প তার উত্তরসূরীর জন্য স্বাগতমূলক কোনো চিঠি লিখবেন কিনা?
এই জল্পনার মধ্যে যখন বুধবার খবর প্রকাশিত হয় যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প বাইডেনের উদ্দেশে একটি চিঠি ওভাল অফিসে রেখে গেছেন, এরপর থেকেই সামাজিক মাধ্যমে এ সংক্রান্ত নানান ধরনের মিম তৈরি করেছেন ব্যবহারকারীদের অনেকে। তারা কল্পনা করার চেষ্টা করেছেন চিঠি আসলে কী লিখে থাকতে পারেন ট্রাম্প। "Joe, you know I won" লেখা চিঠি এরকম একটি ব্যাঙ্গাত্মক মিম। হাস্যরসের উদ্দেশ্যে টুইটারে অনেকে এটি পোস্ট করেছেন।
নিচের এই এবং এই লিংকে তেমন বেশ কিছু মিম দেখতে পারেন।
চিঠিতে গরমিল:
ভাইরাল হওয়া চিঠিতে বেশ কিছু গরমিল রয়েছে। প্রথমত, ট্রাম্প সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন চিঠিতে হোয়াইট হাউজের যে প্যাড ব্যবহার করেছেন সেগুলোর মনোগ্রামের সাথে ভাইরাল হওয়া চিঠির মনোগ্রামের মিল নেই।
ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লেখা কিছু চিঠি দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
এছাড়া ট্রাম্পের সাম্প্রতিক চিঠিগুলোতে তারিখ যেখানে যেভাবে লেখা থাকে ভাইরাল চিঠিতে তাও সেভাবে লেখা নয়।
ট্রাম্পকে সব সব সময় চিঠির ডান পাশে নিচে সাইন করতে দেখা যায়। কিন্তু ভাইরাল হওয়া চিঠিতে সিগনেচারটি বাম পাশে।
ট্রাম্পের চিঠিতে নিচে কখনো হোয়াইট হাউজের ঠিকানা দেয়া থাকে না। কিন্তু ভাইরাল চিঠিতে তা আছে।
সিগনেচারে গরমিল:
ভাইরাল হওয়া চিঠিতে ট্রাম্পের যে সিগনেচার দেখা যাচ্ছে সেটি তার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে করা সিগনেচারের সাথে মিলে না। বরং এটি মিলে ২০১৫ সালের আগে তার সিগনেচারের যে গঠন ছিলো তার সাথে। তুলনামূলকভাবে ট্রাম্পের সিগনেচারের পরিবর্তন এবং ভাইরাল হওয়া চিঠিতে থাকা সিগনেচারের মিল-অমিল দেখুন নিচের ছবিতে--
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ট্রাম্পের নিজের সিগনেচারে কেমন পরিবর্তন এসেছে তা বুঝতে ২০১৭ সালে প্রকাশিত The Fiscal টাইমস এর এই প্রতিবেদনটি পড়ুন। আগের সিগনেচারে উপর দিকের কলমের রেখাগুলো কম চোখা ছিলো, যা ২০১৭ সাল থেকে পরের সিগনেচারে অনেক বেশি চোখা।