সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি ও পেজ থেকে একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ২০০৬ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভারত সফরকালে তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং তাঁকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ৬ সেপ্টেম্বর ''Wosman Goni" নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে এমন একটি ভিডিওটি শেয়ার করে লেখা হয়, "২০০৬ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভারত সফর করেন। এসময় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান।" পোস্টের স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, পোস্টে ভিডিওর বর্ণনায় করা দাবিটি সঠিক নয়। বিমানবন্দরে নয় বরং ভিডিওটি ২০০৬ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে দেশটির প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের অভ্যর্থনা জানোনোর। সে সময়ে বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ই আহমেদ ও পররাষ্ট্রসচিব শ্যামশরণ।
কী ফ্রেম কেটে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে, আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) এর আর্কাইভ ইউটিউব চ্যানেল 'AP Archive' এ "Bangladesh PM Zia visits" ক্যাপশনে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়, যা ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই পোস্ট করা হয়েছে। ভিডিওর বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০০৬ সালের ২১ মার্চ ভারত সফরকালে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতি ভবনের এই পূর্বনির্ধারিত অনুষ্ঠানেই মনমোহন সিং খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান। ভিডিওটি দেখুন--
সার্চ করার পর, ভারতের মিনিস্ট্রি অব এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্সের ওয়েবসাইটে "Joint Press Release, State Visit of Begum Khaleda Zia, Prime Minister of Bangladesh" শিরোনামে ২০০৬ সালের ২২ মার্চ প্রদান করা একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ২০ মার্চ থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত ভারত সফর করেন। স্ক্রিনশট--
লক্ষ্য করলে দেখা যায় এপি আর্কাইভে খুঁজে পাওয়া ভিডিওটির বিবরণে দৃশ্যমান কার্যক্রম ২০০৬ সালের ২১ মার্চ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরো সার্চ করার পর, ভারতীয় সংবাদ সংস্থা ট্রিবিউন নিউজ সার্ভিস- এ ২০০৬ সালের ২০ মার্চ "Khaleda assuages Indian concerns on terrorism" শিরোনামে প্রকাশিত একটি খবর খুঁজে পাওয়া যায়। খবরের একাংশে লেখা হয়েছে, "Formal talks between the two principals — Dr Manmohan Singh and Ms Zia — are scheduled for tomorrow evening. After delegation-level talks, the two sides will sign several agreements in the presence of the two Prime Ministers." । এ থেকে বোঝা যায় তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সাথে বেগম খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ হয়েছিল সফরের দ্বিতীয় দিন বা ২১ মার্চ। স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ মনমোহন সিংয়ের স্বাগত জানানোর ভিডিওটি প্রথম দিনের নয় বরং দ্বিতীয় দিনের। আবার এটি বিমানবন্দরে নয় বরং ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে ধারণ করা।
খালেদা জিয়াকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন ভারতীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
কীওয়ার্ড ধরে সার্চ করে, খালেদা জিয়ার তৎকালীন সফর সংক্রান্ত একাধিক সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায় ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে। তন্মধ্যে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসে "Visit will improve ties: Khaleda" শিরোনামে ২০০৬ সালের ২০ মার্চ প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, বিমানবন্দরে বেগম খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানিয়েছিলেন ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ই আহমেদ ও পররাষ্ট্রসচিব শ্যামশরণ। স্ক্রিনশট দেখুন--
একই তারিখে ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের অনলাইন সংস্করণে "Khaleda chirps, Delhi sings along" শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি খবর খুঁজে পাওয়া যায়। একই খবরে দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের অনুরূপ তথ্য দেয়া হয়েছে। স্ক্রিনশট দেখুন--
পাশাপাশি ঐ সফরকালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে ই আহমেদ ও শ্যামশরনের স্বাগত জানানোর খবর প্রকাশিত হয় দেশের সংবাদমাধ্যমেও। তন্মধ্যে, দৈনিক প্রথম আলোয় ২০০৬ সালের ২১ মার্চ "নয়াদিল্লিতে খালেদা জিয়াকে উষ্ণ সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে" শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও ভারতের ইন্দিরা গান্ধী বিমানবন্দরে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ই আহমেদ ও পররাষ্ট্রসচিব শ্যামশরণ কর্তৃক রাষ্ট্রীয় সফররত খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানানোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। একটি অনলাইন সংগ্রহশালা সূত্রে পাওয়া ২০০৬ সালের ২১ মার্চ প্রথম আলো পত্রিকা থেকে--
অর্থাৎ মনমোহন সিং নয় বেগম খালেদা জিয়াকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানিয়েছিলেন তৎকালীন ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ই আহমেদ ও পররাষ্ট্রসচিব শ্যামশরণ।
প্রসঙ্গত, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে গত সোমবার ভারত পৌছেছেন যেখানে বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান ভারতের রেল ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী দর্শনা বিক্রম জারদোশ। পরে সফরের দ্বিতীয়দিন মঙ্গলবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে স্বাগত জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
সুতরাং ২০০৬ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভারত সফরকালে দেশটির রাষ্ট্রপতি ভবনে মনমোহন সিংয়ের অভ্যর্থনা জানানোর ভিডিওকে বিভ্রান্তিকর দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে।